Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:22 pm

নভেম্বরেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসছে জিপিএইচ ইস্পাত

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের ইস্পাত খাতের কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাতের সম্প্রসারিত প্রকল্পে দেশি-বিদেশি ২২ জন বিশেষজ্ঞ দ্বারা পুরোদমে চলছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন কাজ। সব ঠিক থাকলে নভেম্বরেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের প্রতিষ্ঠানটি। এতে প্রতিষ্ঠানটি রূপান্তরিত হবে দেশের প্রথম ও একমাত্র কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেসভিক্তিক কোম্পানি। ফলে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক বিলেট উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়াবে ১০ লাখ মেট্রিক টন এবং এমএস রড এবং মিডিয়াম সেকশন প্রডাক্টের মোট বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে সাত লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। মানসম্মত ইস্পাতের চাহিদা পূরণে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে করে জিপিএইচ ইস্পাত। গত তিন বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক সম্প্রাসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে মানসম্মত ইস্পাত উৎপাদন প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে কাজ শুরু করে জিপিএইচ ইস্পাত। এ সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করে। এর মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা দেশি-বিদেশি ব্যাংক থেকে ধারাবাহিকভাবে ঋণ নেওয়া হয়। বাকি অর্থ কোম্পানির নিজস্ব তহবিল, রাইট শেয়ারের মাধ্যমে এবং কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে রাইট শেয়ারের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২৬১ কোটি ৯৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে। এ রাইট শেয়ারের মাধ্যমে উত্তোলিত টাকার মধ্যে ২৬১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এর মধ্যে খরচ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গত তিন বছরের প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে বসিয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ উৎপাদন যন্ত্র। কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তির এ কারখানা স্থাপনে সব ধরনের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সম্প্রসারিত প্রকল্পের দেশি-বিদেশি ২২ জন বিশেষজ্ঞ দ্বারা চলছে পরীক্ষামূলক উৎপাদন কাজ। সব ঠিক থাকলে দ্রুত সময়ে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসবে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের প্রতিষ্ঠানটি।

এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি রূপান্তরিত হবে দেশের প্রথম ও একমাত্র কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেসভিত্তিক কোম্পানি এবং বৃহৎতম ইস্পাত উৎপাদনকারী কারখানা। নতুন প্লান্টে বছরের এমএস বিলেটের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা আট লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন এবং এমএস রড এবং মিডিয়াম সেকশন প্রডাক্টের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছয় লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বৃদ্ধি পাবে। ফলে প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১০ লাখ আট হাজার মেট্রিক টন এবং এমএস রড এবং মিডিয়াম সেক্শন প্রডাক্টের মোট বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা সাত লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এ প্লান্ট থেকে সরকার বছরের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে। পাশাপাশি ৫০ শতাংশ গ্যাস ও বিদ্যুৎ কম ব্যবহার হবে। এছাড়া এ প্লান্টে উৎপাদিত হবে দেশের সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন।

এ বিষয়ে কোম্পানিটির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল শেয়ার বিজকে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশে নির্মাণ খাতে মানসম্মত ইস্পাতের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়ছে। আমাদের সম্প্রসারিত প্লান্ট অধিক উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি উচ্চ মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম নিশ্চয়তা নিশ্চিত করবে; যা দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এর মধ্যে চীনে আমরা বড় চালান বিলেট রপ্তানি করতে যাচ্ছি। এছাড়া আমরা রডও রপ্তানি করার জন্য কাজ চলছে।

উল্লেখ, আশির দশকের শেষের দিকে চট্টগ্রামে ট্রেডিং ব্যবসা শুরু করেন শিল্পোদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম। ২০০০ সালে চট্টগ্রামে একটি ম্যানুয়াল রি-রোলিং মিল কিনে সেখানে কনস্ট্রাকশন রড ম্যানুফ্যাকচারিং শুরু করে। ২০০৬ সালে প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও কলেবর বাড়ানোর পাশাপাশি কোম্পানির নাম দেন জিপিএইচ ইস্পাত; যা ২০১২ সালে তালিকাভুক্ত হয় দেশের পুঁজিবাজারের। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ারের উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৪৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ১৬ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৩৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ।