নয়াপল্টনে বিএনপি ও বায়তুল মোকাররমের দ.গেটে আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে রাজপথে থাকা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠনকে একই দিনে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। সমাবেশ ঘিরে উত্তেজনা যেন সংঘাতের দিকে না গড়ায়, সে জন্য পুলিশ দুই পক্ষকেই ২৩টি শর্ত বেঁধে দিয়েছে।

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি আজ শুক্রবার বেলা ২টা থেকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল। অপরদিকে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ শুক্রবার বেলা ৩টা থেকে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছিল।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, দুই পক্ষকেই তারা অনুমতি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আশুরার নিরাপত্তায় পুলিশের ব্যস্ততা রয়েছে, প্রতিদিন তাজিয়া মিছিল হচ্ছে। তারপরও বিএনপি ও যুবলীগকে তাদের পছন্দের জায়গায় ২৩টি শর্তে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।’

দুই দলকেই তাদের চৌহদ্দী নির্ধারণ করে দেয়ার কথা জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, বিএনপির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে পুলিশ হাসপাতালের মোড় (ফকিরাপুল) পর্যন্ত এলাকার মধ্যে তাদের মিছিল-সমাবেশ এবং মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। আর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকে মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে মুক্তাঙ্গনের মধ্যে তাদের সমাবেশ এবং মাইক ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

বড় দুই দলকে একই দিনে সমাবেশের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো পর্যালোচনা করা হয়েছে নাকি ‘সহানুভূতিশীল হয়েই’ তাদের অনুমতি দেয়া হয়েছেÑজানতে চাইলে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমাদের কাছে এই মুহূর্তে বড় কোনো থ্রেট নেই। যেহেতু বড় দুটি দলের বড় সমাবেশ, তাই যে কোনো কুচক্রী মহল বা যে কেউ এই সমাবেশের সুযোগ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে। এ জন্য আমরা পর্যাপ্ত পুলিশ রাখব, আনসার থাকবে, আর্মড পুলিশ (এপিবিএন) থাকবে, র‌্যাব থাকবে, আমাদের বিজিবি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকব।’

বিএনপির মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। সে জন্য নয়াপল্টন অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চেয়েছিল দলটি। এর পাল্টায় আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ বৃহস্পতিবার

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল।

কিন্তু বৃহস্পতিবার কার্যদিবস হওয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশ কোনো দলকেই অনুমতি দিচ্ছিল না। বিএনপিকে সমাবেশের জন্য গোলাপবাগ মাঠ ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছিল পুলিশের তরফ থেকে।

এ পরিস্থিতিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কর্মসূচি এক দিন পেছানোর সিদ্ধান্ত হয়। গত বুধবার রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, বৃহস্পতিবার নয়, তারা মহাসমাবেশ করবেন শুক্রবার বেলা ২টায়। আর সেটা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই হবে।

তখন যুবলীগও জানায়, তাদের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশ এক দিন পিছিয়ে শুক্রবার বেলা ৩টায় নেয়া হয়েছে। শেরেবাংলা নগরে পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে সেই কর্মসূচি হবে।

তবে বৃহস্পতিবার আবারও সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে যুবলীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান জানান, শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করার জন্য আবারও অনুমতি চেয়েছেন তারা। বেলা ৩টায় সেখানে সমাবেশ হবে।

কর্মদিবসে সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে দুই দলকেই ধন্যবাদ জানান পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, ‘দুই দলের ক্ষেত্রেই আমাদের তরফ থেকে নির্দেশ ও অনুরোধ থাকবে তারা কোনো লাঠিসোটা কোনোভাবেই সমাবেশে আনতে পারবেন না। কোনো ব্যাগ বহন করতে পারবেন না। রাষ্ট্রদ্রোহী কোনো বক্তব্য কেউ দিতে পারেন না। নির্ধারিত চৌহদ্দীর বাইরে মাইক ব্যবহার করতে পারবেন না। জনদুর্ভোগ এড়াতে প্রত্যেক দলই নিজস্ব ভলান্টিয়ার রাখবেন। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রত্যেক দলই তাদের স্বেচ্ছাসেবক বা শৃঙ্খলার জন্য লোক রাখবে, যারা পুলিশকে সার্বিকভাবে সহায়তা করবে। কোনো দলই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার মতো কোনো কাজ করবেন না। যদি আমরা কোনো দলের পক্ষ থেকে এ রকম দেখি, তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

রাতের বেলায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ বিএনপি করছে, সে প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টা আমাদের চেকপোস্ট আছে। ২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা হয়। আমরা সেই জঙ্গি হামলার কথা ভুলে যাইনি। আপনারা জানেন আশুরা শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই তাজিয়া মিছিল হচ্ছে। এর মধ্যে এখানে দুটি বড় রাজনৈতিক দলের সমাবেশ। এখানে যেহেতু বাইরে থেকে এসে কোনো কুচক্রী মহল দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। সার্বিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এখানে চেকপোস্টসহ সার্বিক নিরাপত্তা কার্যক্রম চলছে এবং নিয়মিত মামলা ও ওয়ারেন্টের আসামিদের গ্রেপ্তার করতে হয়। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযানের পার্ট। আমরা এই কাজ অতীতেও করেছি, এখন করব।’

বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে গিয়ে সেখানে অবস্থানরতদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে, তারা যে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে আসেননি এমন তথ্য-প্রমাণ দিতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ আসছে। আবাসিক হোটেল থেকে অনেককে আটক করা হচ্ছে। বিএনপির সমাবেশ ‘ঠেকানোর জন্য’ এসব করা হচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক।

জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জি না, এমন কোনো কিছু করা হচ্ছে না। তবুও আমার কোনো অফিসারের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা সেটা তদন্ত করে দেখব। আমরা কোনো রাজনৈতিক দল বা কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযানে নামিনি।’

সমাবেশের সময় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়Ñবিএনপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, ‘আমি বিটিআরসি বা এনটিএমসির মেম্বার না। তবে আমার জানা মতে, কোনো মোবাইল ফোনই কোনো খানে অফ করা হয় না। তবে একটা টাওয়ারের ধারণক্ষমতা কত? একটা টাওয়ারের ধারণক্ষমতা যদি ১০ হাজার হয় আর সেখানে যদি ১০ লাখ লোক থাকে, তাহলে তো সমস্যা হবেই।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০