প্রীতিরঞ্জন সাহা, নরসিংদী: আর মাত্র ১০ দিন পর শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। পূজাকে আরও উৎসবমুখর করতে নরসিংদীর পূজা মণ্ডপগুলোয় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দেবী দুর্গাকে সাজাতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জেলার প্রতিমা কারিগররা। শত কষ্টের মধ্যেও দুর্গাকে সাজাতে পেরে কিছুটা প্রশান্তি পাচ্ছেন এসব কারিগর।
আসছে ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর এই দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মণ্ডবে মণ্ডবে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রতিমাশিল্পীর তুলির আঁচড়ে যেন প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে দেবী দুর্গার। প্রতিমা কারিগরদের যেন দম ফেলার সময় নেই। এবার নরসিংদী জেলায় সর্বমোট ৩৩০টি মণ্ডবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে বেশ কয়েকটি পূজা মণ্ডবে ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। দিনরাত প্রতিমাশিল্পীরা কাজ করছেন। খড় আর কাঁচামাটি ও রঙের কাজ শেষে এখন নানা সাজসজ্জায় দেবী দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক ও গণেশসহ সব দেবতাকে বর্ণিল করে তোলার কাজ চলছে। দুর্গাপূজাকে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পূজা কমিটির পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। এরই মধ্যে পূজা কমিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার।
টাঙ্গাইলের প্রতিমাশিল্পী সঞ্জিত পাল দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নরসিংদীতে প্রতিমা তৈরির কাজ করে আসছেন। তিনি জানান, আগে যে মূর্তি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হতো, এখন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে এবছর প্রতিমা তৈরি করা হলেও রং, বাঁশসহ প্রতিমা তৈরির আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের নাম অনেক বেশি। একটি প্রতিমা তৈরি করতে তিন-চার কারিগর মিলে একটি প্রতিমা তৈরি করতে কমপক্ষ ১২ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে। সে হিসেবে অনেক খরচ বেশি হলেও বিক্রি করতে হয় কম দামে। তিনি নরসিংদী শহরের বিশ্বকর্মা প্রতিমা শিল্পালয়ে এ পর্যন্ত ৪২টি প্রতিমা তৈরি করছেন।
গতকাল শনিবার নরসিংদী জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে নরসিংদী পৌরসভা মিলনায়তনে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে এক আলাচনা সভার আয়োজন করা হয়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডাকসুর সাবেক জিএস নরসিংদী সদরের সাবেক এমপি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব নরসিংদী সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ মন্জুর এলাহী, নরসিংদী জেলা পূজা উদ্যাপন কমিটির অন্যতম সদস্য দীপক কুমার প্রিন্স, বিএনপি নেতা মোহসিন হোসেন বিদ্যুৎ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
খায়রুল কবির খোকন বলেন, জেলায় শারদীয় দুর্গোৎসব উদ্যাপনে বিএনপির পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগসুবিধা ও আইনগত সহায়তা প্রদান করা হবে। তিনি নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট পূজা মণ্ডপ, মন্দির কমিটি ও পূজারিদের প্রতি আহ্বান জানান।
নরসিংদীতে প্রায় ১৯টি প্রতিমা শিল্পালয় গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে নরসিংদী শহরে ছটি, সদর উপজেলার পাঁচদোনায় চারটি, শিবপুরের যোশরে তিনটি, পলাশে দুটি, রায়পুরায় দুটি ও মনোহরদীতে দুটি প্রতিমাশিল্পালয় রয়েছে। এতে প্রায় দেড় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। পাশাপাশি ভারত থেকেও মৃৎশিল্পীরা চুক্তিতে এসব প্রতিমা শিল্পালয়ে কাজ করছেন। মৃৎশিল্পীদের হাতের নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করে প্রতিমার সৌন্দর্য। মানে ভালো ও দামে কম হওয়ায় নরসিংদীর প্রতিমার চাহিদা দেশজুড়ে। এ বছর নরসিংদী জেলায় ৩৩০টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৯৬টি, শিবপুরে ৬৭টি, রায়পুরায় ৫৮টি, মনোহরদীতে ৪৬টি, পলাশে ৪২টি এবং বেলাবোতে ২১টি। উল্লেখ্য, এর মধ্যে নরসিংদী পৌরসভায় ৩৩টি এবং মাধবদী পৌরসভার ৯টি পূজামণ্ডপ রয়েছে।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী এরই মধ্যেই জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা এবং মন্দির কমিটির লোকদের নিয়ে নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপনের লক্ষ্যে একাধিক সভা করা করেছেন।
পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান জানান, শারদীয় উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আনসার ও স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত থাকবে।