নিজস্ব প্রতিবেদক: নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান আজিমউদ্দিন ও চার সদস্যসহ মোট ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গতকাল বৃহস্পতিবার সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করা হয়। দুদকের উপপরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী এটি দাখিল করেন। দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৫ মে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। মামলায় আসামি ছয়জন হলেও চার্জশিটে নতুন করে তিনজনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আসামিরা হলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, সদস্য এমএ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০’ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হচ্ছে ট্রাস্টি বোর্ড। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কতিপয় সদস্যের অনুমোদনের মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯ হাজার ৯৭ ডেসিমেল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত হিসেবে অপরাধজনকভাবে নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি নাম দেখিয়ে আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা যায়, আসামিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন। পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন। এরপর নিজেরা এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আসামিরা সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেরা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন এবং ওই বেআইনি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কমিশন বা ঘুষের আদান-প্রদান করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে।
আত্মসাতের অর্থ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে তারা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধও সংঘটন করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪২০/ ১৬১/১৬৫ ক ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা তৎসহ মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী-স্বজনদের চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয় ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক।