নর্থ সির কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে শেভরন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: শেভরন জানিয়েছে, তারা যুক্তরাজ্যের নর্থ সির তেল ও গ্যাস উত্তোলনের সরঞ্জাম এবং সিস্টেমগুলো বিক্রি করে দেবে। এ পদক্ষেপের ফলে ৫৫ বছরের বেশি সময় পর ওই এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক কোম্পানির প্রস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে। খবর: রয়টার্স।

শেভরন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি হেসকে ৫৩ বিলিয়ন বা পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে, এই অর্থের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার আসবে বিশ্বজুড়ে তাদের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে।

শেভরনই সবশেষ কোনো কোম্পানি হিসেবে ব্রিটিশ অববাহিকা থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এ অঞ্চলে সত্তরের দশকে সমুদ্রের তলদেশে তেল ও গ্যাস সন্ধান এবং উত্তোলনের কাজ শুরু হয়।

ব্রিটিশ নর্থ সিতে শেটল্যান্ড অঞ্চলের পশ্চিমে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি) পরিচালিত ক্লেয়ার আউটফিল্ডে ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে শেভরনের। এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই তেলক্ষেত্রের দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা এক লাখ ২০ হাজার ব্যারেল।

ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম জানিয়েছে, তারা ক্লেয়ার সাউথ নামে নর্থ সি’র অব্যবহƒত ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে বৃহত্তম ক্ষেত্রটিতে তৃতীয়বারের মতো উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করবে।

নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাজ্যে তেল উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা ৪৫ লাখ ব্যারেল। ২০২৩ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে দৈনিক ১ দশমিক ২ মিলিয়ন বা ১২ লাখ ব্যারেলে।

শেভরন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা সুলোম ভই টার্মিনাল এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত নিনিয়ান ও সার্জ পাইপলাইন সিস্টেমসের মালিকানাও বিক্রি করবে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই শেয়ারের মালিকানা বিক্রি বাবদ কর সুবিধা ছাড়াও ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার পেতে পারে শেভরন। বিক্রির প্রক্রিয়াটি আনুষ্ঠানিকভাবে জুনে শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেভরন ২০১৮ সালে রোজব্যাংক ফিল্ডে তাদের মালিকানাধীন শেয়ারের অংশ ইকুইনরের কাছে বিক্রি করে দেয়। এক বছর পর তারা তাদের নর্থ সির বেশিরভাগ সম্পদ ইথাকা এনার্জির কাছে বিক্রি করে। শুধু তা-ই নয়, এক্সন মোবিল, কনোকো ফিলিপস ও শেলের মতো কোম্পানিগুলো ২০০০ সালের পর থেকে এই এলাকায় তাদের সম্পদ বিক্রি করে আসছে।

কনসালটেন্সি ফার্ম ওয়েলিজেন্সের বিশ্লেষক ডেভিড মোজলি বলেন, শেভরন তাদের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য থেকে উত্তর আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রস্থানের প্রবণতা ধরে রাখল।

এর আগে ২০২০ সালে মিয়ানমারে থাকা তাদের সব সম্পদ কানাডিয়ান কোম্পানি এমটিআইয়ের কাছে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয় শেভরন। সামরিক অভ্যুত্থানের আগে শেভরন এবং আরও কয়েকটি কোম্পানি মিয়ানমার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শেভরন দেশটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করে তখন।

শেভরন ২০২২ ও ২০২৩ সালে রেকর্ড মুনাফা করে। এই দুই বছরে শেভরন বাজারের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম অনেকটা বেড়ে যায়। বছরের শেষ প্রান্তে দাম আবার কমতে শুরু করে। দাম কমলেও উৎপাদন ও চাহিদা বেড়েছে, সে কারণে এই জ্বালানি কোম্পানিটির মুনাফা বৃদ্ধি পায়। এরপর জ্বালানির দাম যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরে গেলেও তেল পরিশোধন ও বাজারে উচ্চ চাহিদার কারণে তাদের মুনাফা বেড়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রেকর্ড মুনাফা করে জ্বালানি কোম্পানিগুলো। পশ্চিমা বিশ্বের বড় ছয়টি জ্বালানি তেল কোম্পানি ২০২২ সালে সব মিলিয়ে মুনাফা করেছে ২১ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। এগুলোর মধ্যে কেউ কেউ ইতিহাসের সর্বাধিক মুনাফা করে। পুরো পৃথিবীর মানুষকে উচ্চ মূল্যে জ্বালানি কিনতে হয়েছে বলে এত মুনাফা করে জ্বালানি কোম্পানিগুলো।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০