নর্দার্ন জুটে সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নর্দার্ন জুটের শেয়ার ক্রেতারা এখন হায় হায় করছেন। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ারদর কমেছে ২৬৩ টাকা। ফলে শেষ সময়ে চড়া দরে অতিমূল্যায়িত নর্দার্ন জুটের শেয়ার ক্রয়ের হুজুগে যারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন, সেসব হতভাগ্য ক্রেতা এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে।

তথ্যমতে, চলতি বছরের শুরুতে নর্দার্ন জুটের শেয়ার ২১৯ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল। এর পর থেকে অধিকাংশ সময় টানা কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়তে থাকে। আগস্টের শেষ দিকে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ৬৯৬ টাকা ২০ পয়সা বেচাকেনা হয়েছে। অর্থাৎ আট মাসের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৪৭৭ টাকা ১০ পয়সা বা ২১৭ শতাংশ। সর্বোচ্চ দরে বেচাকেনার পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর ফের পতন ধারায় ফিরে আসে। গতকাল কোম্পানির শেয়ার সর্বনি¤œ ৪৩২ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪৪৯ টাকা বেচাকেনা হয়েছে। সর্বশেষ কোম্পানির শেয়ার ৪৩৩ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ মাত্র এক মাসের ব্যবধানে কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারে দর হারিয়েছে  ২৬৩ টাকা বা ৩৭ শতাংশ।

দরপতনের কারণ জানার জন্য কোম্পানি সচিব শাহাদাৎ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে পিই রেশিও অনুযায়ী কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত ২ অক্টোবর অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির পিই রেশিও ৮৭ দশমিক ৩৭ পয়েন্টে এবং নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী পিই রেশিও ৬২২ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বিশ্লেষকদের মতে, কোনো কোম্পানির পিই রেশিও ১৫ পর্যন্ত থাকলে ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে উত্থান ও পতনে কিছু দুর্বল কোম্পানি নিয়ে খেলায় মেতে ওঠে একটি চক্র। এ চক্রের ফাঁদে পড়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির শেয়ারে  বিনিয়োগ করে। সুযোগ বুঝে চক্রটি বেরিয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিনিয়োগকারীরা। তাই এসব ফাঁদে পড়ে বিনিয়োগ না করার পরামর্শ দেন তারা।

কোম্পানির লভ্যাংশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের আগে বেশ কয়েক বছর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করে। তবে ওই বছর মোট সাত শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে ফিরে আসে। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উঠে আসলে সেখানে বেশিদিন টিকতে পারেনি। ২০১৬ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য পাঁচ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে ফের ‘বি’ ক্যাটাগরিতে নেমে আসে। গত সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোট ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ নগদ এবং ২০ শতাংশ বোনাস। এ সময় শেয়ারপ্রতি কার্যকরী নগদ প্রবাহের পরিমাণ (এনওসিএফপিএস) মাইনাস অর্থাৎ ৫৮ টাকা ৯ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে পাঁচ টাকা ১৩ পয়সা।

পুঁজিবাজারে ১৯৯৪ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন এক কোটি ৭৮ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১৭ লাখ ৮৫ হাজার। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৪ দশমিক ৬২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০