শেয়ার বিজ ডেস্ক: ফ্রান্স নিজেদের মোট বিদ্যুতের দুই-তৃতীয়াংশ পেয়ে থাকে এমন নিউক্রিয়ার প্ল্যান্ট থেকে, যেগুলো ইউরেনিয়াম ছাড়া অচল। সেই ইউরেনিয়ামের বড় একটা অংশ কয়েক দশক ধরে নাইজার থেকে আমদানি করছে ফ্রান্স। তবে গত ২৬ জুলাই নাইজারে সামরিক অভ্যুত্থানের পর ইউরেনিয়াম খনিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে জেনারেল আব্দোররাহমানে তিয়ানির সরকার। এরপর ইউরেনিয়াম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করেছে তার সরকার। এতে বিপাকে পড়েছে ফ্রান্সের বিদ্যুৎ খাত। খবর: ডয়চে ভেলে।
অভ্যুত্থানের পর নাইজারের সামরিক সরকারের পক্ষ থেকে ফরাসি কর্তৃপক্ষকে নাইজার ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। অবশ্য ফরাসি রাষ্ট্রদূত সিভলেঁ ইতে রাজধানী নিয়ামে ছাড়েননি। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁও কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক করে ইউরেনিয়াম সরবরাহ অব্যাহত রাখার আশা ছাড়েননি। কিন্তু নাইজারের পরিস্থিতি ম্যাখোঁর অস্বস্তি বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নাইজারের সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী মাহামান লাওয়ান গায়ার দাবি, এই মুহূর্তে তার দেশের অনেক মানুষ ফ্রান্সের ওপর ভীষণ বিরক্ত। কারণ নাইজারের প্রায় সবাই মনে করেন, ফ্রান্সের সঙ্গে আমাদের অংশীদারিত্ব খুবই অসম।
এক ই-মেইল বার্তায় গায়া জানান, ২০১০ সালে নাইজার যে পরিমাণ ইউরেনিয়াম রপ্তানি করেছে, তার মোট দাম ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ইউরো (৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৩৮০ কোটি ডলার) হওয়ার কথা, অথচ আমরা পেয়েছি মাত্র ৪৫৯ মিলিয়ন ইউরো।
তার মতে, নাইজার যদি ফ্রান্সে ইউরেনিয়াম রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ফ্রান্সে হয়তো এর নাটকীয় প্রভাব পড়বে, কিন্তু নাইজারের অর্থনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।
তিনি জানান, ফ্রান্সে ইউরেনিয়াম রপ্তানি বন্ধ হলে সাধারণ মানুষের মাঝে এর কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে না। কারণ নাইজারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এতদিন শুধু ইউরোপে বিদ্যুৎ সরবরাহে নিজের দেশের ভূমিকা দেখেছে, কিন্তু নিজেরা কখনও বিদ্যুৎ পায়নি।
কয়েক দশক ধরে ওরানো নামের একটি প্রতিষ্ঠান নাইজার থেকে প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম ফ্রান্সে পৌঁছে দিচ্ছে। ফ্রান্সের ৫৬টি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট নাইজারের ইউরেনিয়ামের ওপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে ইউরোপের কয়েকটি দেশ ফ্রান্সের বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল।
তাই প্রশ্ন উঠেছে, নাইজারের নতুন সরকার কি ফ্রান্সে ইউরেনিয়াম রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেবে? নাইজারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধীদলীয় নেতা হামা আমাদু তা মনে করেন না।
ইউরাটোম সাপ্লাই এজেন্সির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নিজেদের মোট ইউরোনিয়ামের
এক-পঞ্চমাংশ নাইজার থেকে পেয়েছে ফ্রান্স। তারপরও দেশটি সমস্যায় পড়েনি, কারণ কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইউরেনিয়াম পেয়ে থাকে তারা।
লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক চ্যাথাম হাউসের অ্যালেক্স ভাইন্স জানান, গত বছর ফ্রান্সের তৃতীয় বৃহত্তম ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী ছিল নাইজার। ওয়ার্ল্ড নিউক্লিয়ার অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে বিক্রি হওয়া ইউরেনিয়ামের পাঁচ শতাংশ ছিল নাইজারের।
তাই বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, সাবেক কলোনি থেকে বছরের চাহিদার এক-পঞ্চমাংশ ইউরেনিয়াম ফ্রান্স না পেলে এবং সেখান থেকে ওই পাঁচ শতাংশ বিশ্ব না পেলে কি বড় বিপর্যয় দেখা দেবে? এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র আডালবার্ট ইয়ান্স বলেছেন, মাঝারি ও স্বল্প মেয়াদে প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট ইউরেনিয়াম এখন বিশ্ববাজারে রয়েছে।