শেয়ার বিজ ডেস্ক:পশ্চিম আফ্রিকার আঞ্চলিক জোট ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস (ইসিওডব্লিউএএস) নাইজারের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচত সরকারের পতন ঘটানোর পর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্যে, বিশেষ করে নাইজেরিয়ায়। খবর: আফ্রিকা নিউজ।
আফ্রিকা নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রতিবেশী নাইজেরিয়ার সঙ্গে নাইজারের যে আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য ছিল তাতে ছেদ পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অথচ কয়েক বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের আকার বেড়ে চলছিল। এক দশকের বেশি সময় ধরে এই বাণিজ্য চলছে।
ইসিওডব্লিউএএস নাইজারের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সীমিত করেছে এবং সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। গত ২৬ জুলাই নাইজারে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশটির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন দেশটির প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের সদস্যরা। অভ্যুত্থানের পর নাইজারের প্রেসিডেনশিয়াল গার্ডের প্রধান আবদুর রহমান চিয়ানি নিজেকে দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ঘোষণা করেন। এরপর এক জোট হয়ে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইসিওডব্লিউএএস।
এদিকে নাইজার সরকারের জন্য কিছু সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। জঙ্গিবাদ দমনে আফ্রিকায় যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার নাইজার। দেশটির মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে সামরিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন দেশটিকে আফ্রিকায় গণতন্ত্রের মডেল বলে আখ্যা দিয়েছিল। নাইজারের রাজধানী নিয়ামেতে ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এমবাসি জানায়, ২০১২ সাল থেকে দেশটিকে ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা করা হয়েছে।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে নাইজারে সুশাসন, শিক্ষা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির উন্নতির জন্য তাদের বাজেট থেকে ৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার অর্থ বরাদ্দ করেছে। এই অর্থও স্থগিত করা হচ্ছে। বিশ্বে অন্যতম দরিদ্র নাইজার সম্পর্কে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, দেশটি সরকারি উন্নয়ন সহায়তার অংশ হিসেবে বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে পেয়ে থাকে। এছাড়া নাইজার হচ্ছে বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ।
তবে এসব নিষেধাজ্ঞার প্রভাব অনুভূত হচ্ছে নাইজারের সঙ্গে এক হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত থাকা দেশ নাইজেরিয়ায়। নাইজেরিয়ার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে ৭৫ শতাংশ রপ্তানি প্রয়োজন মেটায় নাইজার। নাইজেরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে। ব্যাংকের ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, নাইজারে বছরে ৮২৮ বিলিয়ন নাইরা (নাইজেরিয়ার মুদ্রা) বা ৯৩৪ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি করে নাইজেরিয়া।
সীমান্তে ২০২১ সালে দুই দেশের মধ্যে ১৮০ মিলিয়ন বা ১৮ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়।
নাইজেরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের কাতসিনা রাজ্যের সীমান্তে কয়েক দিন ধরে কয়েক ডজন পণ্যবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। এসব ট্রাকে খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে পচনশীল দ্রব্য রয়েছে। পণ্যের অভাবে নাইজারে পশুসম্পদ, পশু পণ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়েছে।
ট্রাক ড্রাইভার উসমান কাউরা বলেন, তিনি ময়দা নিয়ে নাইজারের উদ্দেশে রওনা করেছিলেন। তার ট্রাকে ১৭ হাজার ডলারের ময়দা পড়ে রয়েছে, যা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
নাইজেরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সীমান্ত বন্ধের সুযোগে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করছেন ব্যবসায়ীরা। ১০০ কেজির এক বস্তা ভুট্টার দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়ে ৫৬ ডলার হয়েছে।
পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ায় নাইজেরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ইসিওডব্লিউএএস’কে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
নাইজেরিয়ার অর্থনীতিবিদ এমেকা ওকেংয়ু বলেন, পুরোনো ট্রান্স-সাহারান বাণিজ্যের অন্যতম রুট নাইজার। এই রুট ধরে দ্রুত সাগরেও যাওয়া যায়। তাই সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব পড়েছে।