Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 8:36 pm

নাইজারে ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রেসিডেন্টকে আটক ও উৎখাতের দুদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে নাইজারের ক্ষমতা দখল করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের প্রধান জেনারেল আব্দুর রহমান চিয়ানি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন। খবর: আল জাজিরা।

গত বুধবার প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের সদস্যরা ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে অবরুদ্ধ করেন। এরপর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাকে উৎখাতের ঘোষণা দেন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। পরে সেনাবাহিনীও এ অভ্যুত্থানে সমর্থন জানায়।

শুক্রবার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, ‘জেনারেল চিয়ানিকে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সেফগার্ড অব দ্য হোমল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা হয়েছে।’

৬২ বছর বয়সী জেনারেল চিয়ানিকে ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ডের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি নাইজারের পূর্বাঞ্চল ইলাবেরির বাসিন্দা। ওই অঞ্চল থেকেই সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদু ইসুফুর ঘনিষ্ঠ লোক ছিলেন। মোহাম্মাদু ইসুফু ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০২১ সালে গণতান্ত্রিক উপায়ে সাধারণ মানুষের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মোহাম্মদ বাজোম। তিনি দায়িত্ব নেয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালায় সেনাবাহিনীর একটি অংশ। ওই সময় জেনারেল চিয়ানি সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। কিন্তু তিনিই আবার দুই বছর পর ক্ষমতা দখল করলেন।

প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমকে আটকের পর পশ্চিমা দেশ ও আফ্রিকার জোটগুলো এর নিন্দা জানায়। তারা নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানায়। কিন্তু সেসব আহ্বানে সাড়া না দিয়ে দুদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। এই সেনা অভ্যুত্থান ১৯৬০ সালে স্বাধীনতার পর নাইজারের প্রথম শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনকে ভেঙে দিয়েছে।

নাইজারের প্রতিবেশী দেশ মালি ও বুরকিনা ফাসোতেও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। মালিতে ক্ষমতা দখলের পর ফ্রান্সের সেনাবাহিনীকে বের করে দেন সেনা কর্মকর্তারা। এরপর নাইজারে অবস্থান নেন তারা। এখন সেখানেও সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থান হওয়ায় আফ্রিকায় ফ্রান্স ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব এবং ক্ষমতা প্রায় শূন্যের কাছে চলে এসেছে।

‘সুস্থ আছেন নাইজারের বন্দি প্রেসিডেন্ট বাজোম’ নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোম তার নিজের নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে বন্দি হওয়ার পরও সুস্থ আছেন। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য দিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে ক্যাথরিন কোলোনা বলেন, সামরিক অভ্যুত্থানটি চূড়ান্ত ছিল না।

তিনি বলেন, বাজোম ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে কথা বলেছেন। ক্যাথরিন কোলোনা আরও জানান, অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীরা যদি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কথা শোনেন, তবে তাদের জন্য একটি উপায় আছে।

ক্ষমতাসীন দলের কার্যালয়ে আগুন

সেনা অভ্যুত্থানের পর আফ্রিকার দেশ নাইজারে সদ্য পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজোমের রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয়ে আগুন দিয়েছেন অভ্যুত্থানের সমর্থনকারীরা। রাজধানী নিয়ামেইয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে।

এ সময় মোহাম্মদ বাজোমের রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে পাথর ছোড়া হয়। কার্যালয়ের বাইরে গাড়িতেও আগুন দেয়া হয়। মোহাম্মদ বাজোম রাজনৈতিক দল নাইজেরিন পার্টি ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সোশ্যালিজমের (পিএনডিএস) প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।

এর আগে অভ্যুত্থানে সমর্থনকারী কয়েকশ মানুষ নাইজারের পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন এবং অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া সেনাদের সমর্থন জানান। এ সময় বিক্ষোভকারীদের রাশিয়ার পতাকা ওড়াতে দেখা যায়। অনেকে ফ্রান্সবিরোধী সেøাগান দেন। অনেকের হাতে ‘বিদেশি ঘাঁটি সরিয়ে নাও’ লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল।

অভ্যুত্থানের সমালোচনা করে মোহাম্মদ বাজোমের অবিলম্বে মুক্তি চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, আফ্রিকান ইউনিয়ন, পশ্চিম আফ্রিকান আঞ্চলিক ব্লক (ইকোওয়াস), ইইউ, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। মোহাম্মদ বাজোমের মুক্তি চেয়েছে রাশিয়াও।

বছর দুয়েক আগে নির্বাচনে জিতে নাইজারের গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মোহাম্মদ বাজোম। তিনি পশ্চিমাপন্থি হিসেবে পরিচিত। নাইজারের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে জিহাদিদের বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নিয়েছেন তিনি। সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র এ দেশটিতে সামরিক ঘাঁটি করেছে। তারা ইউরেনিয়াম-সমৃদ্ধ এ দেশটিতে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা করেছে।