নাইজেরিয়ায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা এমিরেটসের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: নাইজেরিয়া থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থগিতাদেশের ঘোষণা দিয়েছে এমিরেটস এয়ারলাইন। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ ঘোষণা কার্যকর হবে। অনির্দিষ্টকাল ধরে তাদের পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে। খবর: সিএনএন।

দুবাইভিত্তিক এয়ারলাইনের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়া এমিরেটসের তহবিলে মিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, আরও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য বিমান পরিষেবা বন্ধের মতো ‘কঠিন সিদ্ধান্ত’ নিতে হয়েছে। পরিস্থিতি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে’ উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিগগির সমস্যা সমাধানের লক্ষণ নেই।

এমিরেটস গত জুলাইয়ে ঘোষণা করে, নাইজেরিয়া থেকে ৮৫ মিলিয়ন (৮ কোটি ৫০ লাখ) ডলার ‘ফিরে পাওয়ার’ আশা করা হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি মাসে ১ কোটি ডলার লোকসান দিচ্ছে সংস্থাটি। নাইজেরিয়া থেকে তহবিল ফিরে পাওয়ার আশায় সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজছি আমরা। কার্যকর সমাধান খুঁজে পেতে জরুরি হস্তক্ষেপের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার চেস্টা করছি। সংস্থা জানায়, দুঃখজনকভাবে এর কোনো অগ্রগতি নেই।

নাইজেরিয়ায় অন্য আন্তর্জাতিক এয়ারলাইনগুলোও স্বস্তিতে নেই। তাদের রাজস্বও আটকে রয়েছে বলে গত জুনে জানায় ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন। এর পরিমাণ প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন (৪৫ কোটি) ডলার।

লাগোসভিত্তিক বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ সিন্ডি ফোস্টার বলেন, শুধু এমিরেটস এ সমস্যায় পড়েনি। সব বিদেশি উড়োজাহাজ সংস্থা একই দুর্দশা ভোগ করছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সমস্যা শুরু হয় ২০১৬ সালে এবং এর পুনরাবৃত্তি চলছে। এ কারণে নাইজেরিয়া থেকে বেরিয়ে আসছে সংস্থাগুলো।

বিশ্লেষকদের উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, নাইজেরিয়া থেকে ফ্লাইট পরিচালনা বাতিল করা হলে বিনিয়োগকারীরা আবার সমস্যায় পড়বেন। চলতি বছরের শুরুতে পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, গত দুই বছরে এ খাতে বিনিয়োগ কমেছে ৮১ শতাংশ। আফ্রিকার বৃহত্তম অর্থনীতি নাইজেরিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে তুলনামূলক বেশি বিমান পরিবহন সংস্থা রয়েছে এ দেশে। তাছাড়া এ মহাদেশের অপরিশোধিত তেলের বৃহত্তম রপ্তানিকারক হওয়া সত্ত্বেও বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে ভুগছে দেশটি। দেশের সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা আসে এ খাত থেকে। তবে চলতি বছর সরকারের পূর্বাভাসের তুলনায় দেশটি কম তেল উৎপাদন ও রপ্তানি করেছে। দুর্বল উত্তোলন সক্ষমতা ও ভর্তুকির অভাবে সুযোগ নিতে পারছে না দেশটি।

গত জুলাইয়ে এমিরেটস নাইজেরিয়ার কর্তৃপক্ষকে জানায়, তারা পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোয় তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে আনবে। এর আগে নাইজেরিয়া লোকসান কমানোর জন্য তাদের মুদ্রা নাইরায় তেল রপ্তানির উদ্যোগ নিলে তা ব্যর্থ হওয়ায় ফ্লাইট সংখ্যা কমানোর ঘোষণা দেয় এমিরেটস। তবে সংস্থা জানায়, যাত্রীরা যাতে দুর্ভোগে না পড়েন সেজন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে। এমনকি তহবিল ফিরে পেলে কিংবা তহবিলের বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হলে ফ্লাইট বাতিলের স্থগিতাদেশ পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।

অ্যাভায়েরো ক্যাপিটাল পার্টনারসের প্রিন্সিপাল ম্যানেজিং পার্টনার ও বিশ্লেষক ফোস্টার বলেন, সরকার এমিরেটসের ঘোষণা গুরুত্ব না দিলে বেশিরভাগ বিদেশি এয়ারলাইন একই পদক্ষেপ নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, নাইজেরিয়াকে অনেক পন্য আমদানি করতে হয়। এসব পণ্যের লেনদেনের জন্য ডলার দরকার। বিষয়টি শুধু উড়োজাহাজ খাতের সমস্যা নয়। এ ধরনের ঘটনা দেশটির অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক সংকেত বহন করছে।

নাইজেরিয়ার বিমান চলাচল মন্ত্রী হাদি সিরিকা বলেন, অতীতে এ ধরনের সমস্যা সমাধানে বেশ আন্তরিক ছিল আমাদের মন্ত্রণালয়। তবে ২০১৫ সালের পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তখন দেখা যায়, প্রায় ৬০ কোটি ডলার আটকে রয়েছে। তবে তখন দেশে মন্দা চলছিল, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসছিল। এরপরও আমরা অর্থ পরিশোধ করার ব্যাপারে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০