নাগরিকদের স্বাস্থ্য ব্যয় কমাতে উদ্যোগ নিন

পৃথিবীর যেসব দেশে স্বাস্থ্য খাতে নাগরিকদের ব্যক্তিগত ব্যয় বা ‘আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার’ সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এখানে কোনো ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য যদি ১০০ টাকা ব্যয় হয়ে থাকে, তাহলে তার ৬৯ টাকাই যায় নিজের নাগরিকদের পকেট থেকে। অথচ ১৯৯৭ সালে এ ব্যয় ছিল ৫৬ শতাংশ। সময়ের ব্যবধানে বেড়েই চলেছে আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার। এ চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশের মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ছে। ফলে ২৪ শতাংশ মানুষ বিপর্যয়মূলক ব্যয়ের মধ্যে পড়ছে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতি বছর ৬২ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে এবং প্রতি বছর প্রায় ১৬ শতাংশ রোগী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ থেকে বিরত থাকছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগ যেগুলো আছে, যেমন: ক্যানসার, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হƒদরোগ, কিডনি রোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগÑএগুলোর চিকিৎসা করাতে গিয়ে মানুষ তার সহায়-সম্বল হারিয়ে ফেলছে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুসারে, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্য কাভারেজ অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচারের ওপর নির্ভরতা এটি অর্জনের জন্য একটি বড় বাধা। এ বাধা দূর করতে সারা পৃথিবীতে কয়েক ধরনের উদ্যোগ চালু আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑসবাইকে সর্বজনীন হেলথ ইন্স্যুরেন্সের আওতায় আনা। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আগামী বাজেটে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও এ ইস্যুটা বিবেচনা করা যেতে পারে, যাতে মানুষের আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার কমানোর জন্য সর্বজনীন হেলথ ইন্সুরেন্স চালু করা যায়।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘গবেষণা প্রতিবেদন: ৪৬% মানুষ চিকিৎসা খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশের দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবার মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবায় সরকারি সুবিধার ২০ শতাংশও ভোগ করতে পারে না। ৪৬ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা খরচ মেটাতে কোনো না কোনো অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। দরিদ্র জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য সরকারের বরাদ্দও অপর্যাপ্ত বলে উল্লেখ করে দেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে এসডিজি অ্যাকশন অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ খুবই কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, যেকোনো দেশের মোট জিডিপির চার শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত; কিন্তু বাংলাদেশে ধীরে ধীরে মোট জিডিপির অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমে যাচ্ছে। একসময় এটি এক শতাংশের ওপরে ছিল। এখন এটি কমে দশমিক ৮০ শতাংশে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের স্বার্থে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর বিকল্প নেই। আগামী বাজেটেই সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০