নাগরিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিন

 

তাপমাত্রা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা এখন বৈশ্বিক সমস্যা। সব দেশই প্রকৃতি-প্রতিবেশ বাসযোগ্য ও স্বস্তিকর রাখতে উদ্যোগ নিচ্ছে। এটি ঠিক, প্রকৃতির ওপর মানুষের হাত নেই। আবার এও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, জলবায়ু যে ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে, তাতে মানুষের দায় আছে যথেষ্ট। এখন আমাদেরই করণীয় ঠিক করতে হবে। গতকাল গণমাধ্যমে ‘৪০ ডিগ্রি ছাড়াল তাপমাত্রা, রাজধানীতে ৩৭.৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের বেশিরভাগ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে দাবদাহ। প্রতিদিনই তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড করছে। সেই ধারাবাহিকতায় সোমবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা অব্যাহত থাকবে আরও কিছু দিন।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বলা হয়, ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স ২০২১’ অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চ্যালেঞ্জ সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা ও খাপ খাইয়ে চলা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভৌত-প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন, নগরায়ণ, আধুনিকায়ন এবং জনসংখ্যা-উৎপাদন-ভোগ বৃদ্ধির পরিবেশগত অভিঘাত সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করা আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে রক্ষায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি) তৈরি করা হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৪০ কোটি ডলারের বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। এ ফান্ডের অর্থায়নে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে সরকার অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ‘জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করে। এই পরিকল্পনায় ১৪টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ ও ১১টি ‘জলবায়ু সংকটাপন্ন এলাকা’ চিহ্নিত করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। দেশবাসীকে বাসযোগ্য পরিবেশ উপহার দেয়ার লক্ষ্যে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন কার্যকর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পাহাড় ও টিলা কর্তন এবং পুকুর ও জলাশয় ভরাট রোধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত আছে।

ইশতেহারে ক্ষমতাসীন দলটি অঙ্গীকার করেছে জলবায়ু পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা, দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা এবং পানিসম্পদ রক্ষায় সরকার যেসব নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তার বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য উৎপাদনশীল/সামাজিক বনায়ন ২০ শতাংশে উন্নীত; ঢাকা ও অন্যান্য বড় নগরে বায়ুর মান উন্নয়নসহ জলাভূমি সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা; সমুদ্র উপকূলে ৫০০ মিটার বিস্তৃত স্থায়ী সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা কর্মসূচি বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। দেশের বিস্তীর্ণ হাওর ও ভাটি অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।   আশা করা যায়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে অঙ্গীকার রক্ষায় সংশ্লিষ্টরা দায়িত্বশীল হলে অচিরেই সুফল পাবে সাধারণ মানুষ।  তবে নাগরিকদেরও নিজ অবস্থান থেকে সচেতন থাকতে হবে এবং রাষ্ট্র নাগরিকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিলে জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির অভিঘাত সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০