তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: নীলফামারী সদরের সুটিপাড়ায় অস্থায়ী বেদেপল্লির ঝুপড়িঘরে রাতে জ্বলছে সৌরবিদ্যুতের আলো, যে আলো বদলে দিয়েছে যাযাবর বেদেদের জীবন। তবে আজও তারা নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত। তারা সব ধরনের নাগরিক সুবিধা চায়।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাপ ধরে বিক্রি করা, সাপের খেলা দেখানো, সিঙ্গা লাগানো ও তাবিজ-কবজ বিক্রি করে জীবনযাপন করে বেদেরা। আগে পালতোলা নৌকায় করে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বেদেরা চলাচল করত। মাসের পর মাস তারা নৌকায় থাকত। এভাবে চলত তাদের জীবন-জীবিকা। এখন আর নদীও নেই, পালতোলা নৌকাও নেই, নদীর দু’কূল ছাপিয়ে পানিও নেই। তাই তারা পেশাগত কাজের তাগিদে শুকনো মৌসুমে এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝুপড়িঘরে থেকে পেশাগত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
ঢাকার সাভারের রামপুরা, পোড়াবাড়ি, কাঞ্চনপুর ও বক্তারপুর এলাকার বেদেপল্লির একটি দল এখন অবস্থান করছে নীলফামারীর জেলা সদরে সুটি পাড়ায়। সেখানে দিনশেষে সন্ধ্যা হলে তাদের অস্থায়ী ঝুপড়িঘরে জ্বলে উঠছে সৌরবিদ্যুতের আলো। চলছে টেলিভিশন, চার্জ হচ্ছে মোবাইল।
সাপুড়ে সর্দার রবিউল ইসলাম জানান, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জীবনধারার পরিবর্তন হচ্ছে। পেশা হিসেবে বিষধর সাপের খেলা দেখিয়ে ও মেয়েরা সিঙ্গা বসিয়ে, দাঁতের পোকা বের করে, তাবিজ-কবজ বিক্রি করে ও জাদু দেখিয়ে সামান্য আয়-রোজগার করলেও জীবনকে আলোকিত করতে ও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে নিজেদের অর্থায়নে সৌর প্যানেল ব্যবহার করছে। ডেরায় রাত্রীকালীন নিরাপত্তা, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, মোবাইল ফোন চার্জিং সুবিধা, সোলার টিভি ও সোলার ফ্যান ব্যবহার করা হচ্ছে।
বেদেকন্যা বৈশাখী আক্তার জানান, তার দাদি গ্রামে গ্রামে গাওয়াল করে সিঙ্গা লাগিয়ে, দাঁতের পোকা তুলে, তাবিজ-কবজ বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাড় করতেন। এখন তার বাবা শাহজাহান সাপুড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাপের খেলা দেখান।
শরিফ উদ্দিন জানান, অনেক বেদে নারী-পুরুষ বিকল্প পেশা হিসেবে স্থায়ী বাজারে দোকান করছেন, অনেকে হাঁস-মুরগি বা কবুতর পালন, মাছ চাষ ও কাঁথা-কাপড় সেলাইয়ের মতো গৃহস্থালি কাজ করছেন।
সাপুরে সরদার রবিউল জানান, তার চাচা শরিফ উদ্দিন (৮৫) বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও বয়স্কভাতা কিংবা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নারীরা বিধবাভাতা, বয়স্কভাতা ও মাতৃকালীন ভাতা থেকে বঞ্চিত। কেউ তাদের খবর রাখে না। তারা সব ধরনের নাগরিক সুবিধা চায়।