তাপস কুমার, নাটোর: নাটোর বিসিক শিল্পনগরীর বাণিজ্যিক প্লটে শিল্পকারখানা গড়ে না তুলে বসবাসের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে বিসিকের মূল লক্ষ্য শিল্পকারখানা গড়ে তোলার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে শিল্পোদ্যোক্তাদের অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ সুবিধা নিয়ে নাটোর বিসিক শিল্পনগরীতে শিল্প প্লটের আবাসিক ব্যবহারে বিষয়টি দেখেও নিশ্চুপ থাকেন বিসিক কর্মকর্তারা। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
জানা যায়, নাটোরের দত্তপাড়ায় ১৯৮৭ সালে ১৫.৫৬ একর জমিতে বিসিক শিল্পনগরী নির্মাণ করা হয়। ১০৪টি প্লট ৪৭ কারখানার মালিকের কাছে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়। এসব প্লট লিজ নিয়ে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার কথা। শুরুতে এসব প্লটের কিছু রুমে বিভিন্ন ধরনের জুস, চাটনি, তেল ও ব্যবহারিক হাঁড়িপাতিলসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করা হয়।
বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্দেশ্য ছিল দেশের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া। শুরুতে আশানুরূপ সাফল্য আসে। আশাবাদী হতে থাকেন শিল্প মালিকরা। বর্তমানে সে আশা নিরাশায় পরিণত হয়েছে শিল্পনগরীর স্থানীয় অসাধু কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও যথাযথ তদারকি না করার কারণে। যেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা গড়ে ওঠার কথা, সেখানে নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠেছে আবাসিক ভবন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কোনো রকম শিল্পকারখানা নেই, অথচ পরিবার-পরিজন নিয়ে আবাসিক এলাকার মতো দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন অনেকেই। আবার একই প্লটের নিচে ফ্যাক্টরি করে ওপরে আবাসিক ভবন করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করা হচ্ছে। নবতি ইন্ডাস্ট্রিজের ওপরে ভবন তৈরি করে বসবাস করছেন বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি নুরন্নবী সোনার নিজেই।
বিসিক অফিসের সামনে হলেও বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করেন বিসিক কর্মকর্তারা। অবৈধভাবে বসবাস করা নিয়ে সভাপতি নুরন্নবী সোনার কিছু বলতে রাজি হননি। নাটোর কেমিক্যাল নামে যে প্লট আছে সেখানে উৎপাদন বন্ধ আছে দীর্ঘদিন ধরে। সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করা হলেও কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। মৌমিতা আইসক্রিম ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আবদুল মান্নান পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করেই।
অবৈধ বসবাস নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, পাহারাদারের কাজটা নিজেরাই করেন, তাই বসবাস করছেন। অবৈধ বসবাসকারী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আছেন বাগদাদ কটনসহ আরও অনেকে।
বাণিজ্যিক এলাকায় বসবাস করা নিয়ে হতবাক এলাকাবাসী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, বিসিকে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকার কোনো নিয়ম নেই, যেখানে কর্মকর্তারা ঘুষ খেয়ে থাকার অনুমতি দিয়েছেন। অবিলম্বে এ বিষয়টা খতিয়ে দেখা দরকার।
শিল্প মালিক রুহুল আমীন জানান, যেখানে জায়গার স্বল্পতার কারণে নতুন শিল্প গড়ে উঠতে পারছে না, সেখানে বিসিকের মতো শিল্পনগরীতে শিল্প প্লট নিয়ে বসবাস করার বিষযটি দুঃখজনক। প্লটগুলো খালি হলে নতুন শিল্পোদ্যোক্তারা কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ পাবেন।
নাটোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক শরিফুল ইসলাম রমজান জানান, বিসিকের এস্টেট অফিসার দিলরুবা দীপ্তি এবং উপ-ব্যবস্থাপক বজলুর রশীদের যোগসাজশে নাটোর বিসিক শিল্পনগরীতে বাড়িঘর নির্মাণ করে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করা হয়েছে, এটি হয়েছে নিন্দনীয়। অবিলম্বে শিল্পনগরীর অভ্যন্তরের অবৈধ আবাসিক প্লট বাতিল করার দাবি জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।
বিষয়টি দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিসিকের এস্টেট অফিসার (ভ‚মি) দিলরুবা দীপ্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তিনিই বিসিকের স্থানীয় কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করার পর তিনি জানান, এ বিষয়ে তার কিছুই বলার নেই।
অন্যদিকে, বিসিকের পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করার কোনোই নিয়ম নেই। তবে কেন শিল্প প্লটে বসবাস? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে রাজি হননি নাটোর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক বজলুর রশীদ।
জেলা প্রশাসক ও বিসিক শিল্পনগরীর সভাপতি শাহিনা খাতুন জানান, অনেকটা স্বেচ্ছাচারী মনোভাব নিয়েই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন নাটোর বিসিক শিল্পনগরীর স্থানীয় কর্মকর্তারা। তিনি নাটোরে আসার এক বছর হলেও বিসিক কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে পরিচয় হওয়া ছাড়া কোনো আলোচনা করেনি, কোনো মিটিংও করেনি। বাণিজ্যিক প্লট আবাসিক খাতে ব্যবহারের বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।