মো. মাঈন উদ্দীন : অর্থনীতিতে বর্তমানে বড় ধরনের চাপ তৈরি হয়েছে। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাতের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের নানা দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়েছে। দেশের প্রয়োজনীয় পণ্য ও দ্রব্যাদি বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, গম, ভুট্টা, ভোজ্যতেল, সার ইত্যাদির সরবরাহ বাধাগ্রস্ত ও রপ্তানিতেও বাধা তৈরি হচ্ছে। ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, উচ্চমূল্য স্ফীতি, রপ্তানিতে অধঃগতি, আমদানি বেশি হওয়ার কারণে অর্থনীতি অনেকটা চাপে রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারও উপলব্ধি করেছেন বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপে আছে। তিনি বলেছেন, ২-৩ মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে। বছর-দিন যতই যাচ্ছে মানুষের চাহিদা, আকাক্সক্ষা, জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। করোনায় অর্থনীতি যতটা নি¤œমুখী ছিল, তখন সরকারের প্রণোদনাসহ নানামুখী কর্মসূচি ও জনগণের ব্যয় কমানোর অভ্যাস তৈরি হওয়ার পাককালে করোনা-পরবর্তী আমদানি বৃদ্ধি, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি এবং পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনীতিতে তৈরি হচ্ছে নানা সংকট। চাপের মুখে পড়েছে অর্থনীতি। অর্থনীতির আকার দিন দিন বাড়লেও রাজস্ব আদায় সে হারে বাড়ছে না। আবার ডলার সংকট ও বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি খরচও বাড়ছে। বাড়ছে ঋণ পরিশোধের খরচ। তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় জ্বালানি খাতেও ভর্তুকি বেড়ে যাচ্ছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা খরচের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে দেশি-বিদেশি ঋণের সুদের খরচও বাড়ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬৭ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই খাতে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বৈরী পরিবেশ ও আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু বড় প্রকল্পে অর্থ জোগান, বারবার প্রকল্পের সময় ও বাজেট বাড়ানো, দুর্নীতি, জবাবদিহির অভাবসহ নানামুখী চাপে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকও নীতিবাচক ধারায় পতিত হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট, অত্যধিক ব্যাংকনির্ভরতা, টাকার অব মূল্যায়ন, রেমিট্যান্স ও প্রবাসী আয়ে ভাটা, বাণিজ্য ঘাটতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস, রাজস্ব সংগ্রহে গতিহীনতা ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিষয় নিয়েও বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা চাপের মুখে। এই চাপকে সামলিয়ে উত্তরণের পথ কী হতে পারে, তা এখন দেখা উচিত। জ্বালানি সংকটের কারণে দাম বাড়ছে নিত্যপণ্যের। ইতোমধ্যে দাম বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। এতে নি¤œবিত্তের মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করবে। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫% বেড়ে হয়েছে প্রতি লিটারে ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৫১.১৬% বেড়ে প্রতি লিটারে হয়েছে ১৩০ টাকা। অকটেনের দাম ৫১.৬৮% বেড়ে প্রতি লিটারে হয়েছে ১৩৫ টাকা। জ্বালানি তেলের এই দাম বৃদ্ধি শুধু অর্থনীতিকে নয়, সরকারের ওপরও বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে।
মানুষের আয় বাড়ছে না অথচ ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এটা সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। অর্থনীতিও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার ধাক্কা শেয়ার বাজারেও লেগেছে। অর্থনীতিতে চাপ তৈরি হচ্ছে। তাতে শঙ্কিত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরাও। বিশ্লেষকদের মতে, আমাদের বাজার যতটা না অর্থনৈতিক কারণে আক্রান্ত তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক ও ভয়ের প্রভাব দেখা যায়। বাজারদর বাড়ার চেয়ে দরপতনের হারই বেশি লক্ষণীয়। দেশের শিল্প বা অবকাঠামো নির্মাণে বড় পরিমাণ পুঁজি জোগানোর জন্য শেয়ারবাজার বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে পুঁজির জোগান আসে শেয়ারবাজার থেকে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য থাকে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আর দৈনন্দিন সেবা দেয়ার পাশাপাশি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে চলতি মূলধনের জোগান দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। কিন্তু আমাদের দেশে সব কর্মকাণ্ডই ব্যাংক খাত ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। পরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি ঋণ পুনঃতপশিল নীতিমালার উদারীকরণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিলকরণের ক্ষমতা ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের হাতে ছেড়ে দেয়া হয় এবং পুনঃতপশিলের মেয়াদও বাড়ানো হয়। পাশাপাশি ডাউনপেমেন্টের পরিমাণও অস্বাভাবিক হারে কমিয়ে আনা হয়। কভিড-১৯-এর অভিঘাত থেকে জনসাধারণকে সুরক্ষা দিতে এখন পর্যন্ত ২ লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এই প্রণোদনা দুই-তৃতীয়াংশ ঘোষণা হয়েছে ব্যাংকঋণ হিসেবে। স্বল্প সুদে ঋণ পেয়ে ব্যবসায়ীদের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠলেও বিতরণ করা ঋণের বড় একটি অংশ আর ব্যাংকে ফিরে আসছে না। নিয়মিত ঋণের পাশাপাশি প্রণোদনা ঋণের আদায় নিয়েও ব্যাংকগুলো দুশ্চিন্তায় আছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি খাত কৃষি, শিল্প ও সেবা। এই তিন খাতে জোগান আসছে ব্যাংক খাত থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলো বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৫১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। একই সময়ে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে ব্যাংকগুলো এই ঋণ বিতরণ করেছে। দীর্ঘমেয়াদি কোনো কোনো ঋণ ২০-২৫ বছর পর্যন্তও রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের অন্তত ৮০ শতাংশের মেয়াদ অত্যন্ত স্বল্প। সব মিলিয়ে বলা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হলেও কাঠামোগত অনেক দুর্বলতা রয়েছে। দেশের পুরো ব্যাংক ব্যবস্থা দুর্বল কাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির চাপ নেয়া তো দূরের কথা, দেশের অনেক ব্যাংক নিজেই ধষে পড়ার অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থার শৃঙ্খলার অর্থনীতিকে বিপর্যয়ে ফেলে দেবে। কারণ দেশের অর্থনীতির কর্মকাণ্ডের অন্তত ৮০ শতাংশ ব্যাংক খাতকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে।
মূল্যস্ফীতি: মূল্যস্ফীতির কথা বলতে গেলে বলতে হয় জুন পর্যন্ত মূলস্ফীতি বেড়ে হয় ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বিগত ৯ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। তবে খাদ্য মূলস্ফীতি আরও বেশি। বেসরকারি হিসাব মতে, দেশের সার্বিক মূলস্ফীতি ১০ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষির প্রতি অধিক নজর দিতে হবে। সার, কৃষি যন্ত্রপাতি, সেচের বিদ্যুৎ প্রভৃতিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য যাতে কৃষকরা পান তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যের কালোবাজারি, অতি মুনাফা, মজুতদারি বন্ধে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। বিশ্লেষকদের মতে, মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় ব্যাংক সুদের হার বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুদের হার বাড়ানো হলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তারল্য সংকট কমবে এবং লভ্যাংশ বাড়তে পারে। এতে ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা কিছুটা দূরীভূত হতে পারে। বিবিএস তথ্য মতে, দেশে মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। এ ছাড়া শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। মূলস্ফীতি ৭ শতাংশ অতিক্রম করা মানেই হলো জনগণের জন্য বড় দুঃসংবাদ। এতে সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এই মূলস্ফীতি মূলত পাঁচ মাস ধরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। গত অর্থবছরে (২০২১-২২) মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ ধরের রাখার লক্ষ্য ও ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২১-২২ অর্থবছরে (জুলাই-জুন) গড়ে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ রাখার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববাজারে আমদানি পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে; যার প্রভাব অভ্যন্তরীণ বাজারেও পড়তে শুরু করেছে। অর্থনীতির স্বাভাবিক সূত্র অনুযায়ী, আমানতের সুদের হার গড় মূলস্ফীতির ওপরে থাকা বাঞ্ছনীয় সেই হিসাবে আমার আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশে রাখা ঠিক হবে না। তেমনি ঋণের সুদের হারও ৯ শতাংশে বেঁধে রাখা উচিত নয়। সুতরাং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার বেঁধে রাখার বিষয়টি যৌক্তিকতা ভেবে দেখা উচিত।
বিদেশি ঋণ: বাংলাদেশ এই পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে বিলম্ব করেনি ঠিকই; তবে চলমান ও অনুমোদিত বড় অর্থ ব্যয়ের মেগা বা বড় বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের বড় ধাক্কা আসছে সামনে। দৈনিক পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, এই ২০ মেগা প্রকল্পে বিদেশি ঋণ ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ রাশিয়া, জাইকা ও চীনের। এই পর্যন্ত ২০ মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়েছে ৭ হাজার কোটি ডলার। এ দুই-তৃতীয়াংশ বা ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৩৭টি ঋণ প্যাকেজ ২৮ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে। ২০ মেগা প্রকল্পের মধ্যে ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ ঋণ রাশিয়া, জাইকা ও এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার। দুই বা তিনটি প্রকল্প ছাড়া বাকি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অবস্থা ভালো নয়। সময়মতো প্রকল্পগুলো শেষ না হলে রিটার্নও আসতে দেরি হবে। এছাড়া এসব প্রকল্প অধিকাংশই ভৌত অবকাঠামো সম্পর্কিত। এসব প্রকল্প নির্মাণে বিদেশি ঋণের অর্থ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারলে অর্থনীতি সুসংহত থাকবে না। সম্প্রতি সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতি বছর জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ হারে বিদেশি দায়-দেনা শোধ করা হয়। ২০২৬ সালনাগাদ তা প্রায় দ্বিগুণ পরিশোধ করতে হবে। তাই এখন থেকে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রকল্পগুলোর লাভ-লোকসানের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খানুভাবে যাচাই করতে হবে। সময়মতো যাতে প্রকল্প শেষ করা যায় এবং অপচয় ও অহেতুক খরচ যাতে না হয় সেই দিকে সংশ্লিষ্টদের নজর দেয়া উচিত।
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত: জ্বালানি ও বিদ্যুৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে জ্বালানি সংকট কঠিন বাস্তবতা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে শৃঙ্খলায় বাংলাদেশ কঠিন অবস্থা অতিক্রম করছে। ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় সরকার দেশব্যাপী ২-৩ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক লোডশেডিং করছে। এতে শুধু গৃহস্থালি বিদ্যুৎ ব্যবহার, নয় শিল্প উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যার প্রভাব দেশের অভ্যন্তরে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানিতেও ঋণাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করছে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমান্বয় দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই জ্বালানি তেলের দাম জনগণের সাধ্যের মধ্যে রাখা না গেলে তার প্রভাব পুরো অর্থনীতিকে আরও দুর্বল করে দেবে। রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রেও দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে। আমাদের অর্থনীতির আকারের তুলনায় রাজস্ব আহরণ কাক্সিক্ষত মানের নয়। রাজস্ব জিডিপি অনুপাতে বিশ্বের তলানির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশের রাজস্ব জিডিপির অনুপাত মাত্র ১০ শতাংশ। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও লাওসও রয়েছে। রাজস্ব জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশ থেকে নেপালের দ্বিগুণ এবং লাওসের দেড়গুণ বেশি। অন্যান্য স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় ও রাজস্ব জিডিপির অনুপাত আমাদের দেশের কম। মোট রাজস্ব আদায়ের প্রায় ৮৪ শতাংশ আদায় করে এনবিআর। এনবিআরের আদায় করা রাজস্ব জিডিপি অনুপাতের ১০ শতাংশের নিচে। তার বড় কারণ হলো, গত তিন দশকে বড় ধরনের সংস্কার নেই। ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র ২৭ লাখ মানুষ রিটার্ন দেন; তার কারণ সনাতনী পদ্ধতিতে ভ্যাট ও কর রিটার্ন জমা দিতে হয় এবং মানুষকে শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর রিটার্নে অটোমেশনের মাধ্যমে অভ্যস্ত করা যায়নি। নাগরিকদের থেকে পর্যাপ্ত রাজস্ব আদায় করা গেলে এখন অর্থনীতির এই অস্থির সময় কিছুটা স্বস্তি থাকত। বেশি রাজস্ব আদায় হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বেশি অর্থ ব্যয় করা যেত। তাই কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় না হওয়া অর্থনীতির ওপর একটি চাপ। ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব সংগৃহীত হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কম। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। তাই করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। এনবিআরের পূর্ণ অটোমেশন সম্পন্ন করতে হবে।
অর্থনীতির ওপর চলমান চাপ ঠেকাতে সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর নানামুখী সমস্যা ও সংকট মোকাবিলার পদক্ষেপ নিতে হবে। ব্যাংক খাতে সংস্কার খেলাপি ঋণ আদায় ও পুঁজিবাজারকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করতে হবে। রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে হবে। দেশের কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে সহায়তা জোরদার করতে হবে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য প্রবাসে প্রশিক্ষিত জন শক্তি পাঠাতে হবে। বৈধপথে প্রবাসী আয়ের পথ সুগম করতে হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তা
সধরহ৭০৬Ñমসধরষ.পড়স