নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

বইমেলা এলেই লেখক প্রকাশক আর পাঠকদের চিন্তাজুড়ে শুধু বই আর বই। আয়োজক বাংলা একাডেমিও বইপ্রেমীদের এ মিলনমেলাকে নির্বিঘœ আর প্রাণচাঞ্চল্যময় করে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করে। তবে এবার মেলার আয়োজন নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে।

মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে পথে উড়ছে ধুলা। অবস্থা এমনই যে, বিক্রয়কর্মীদের মুখ সবসময় মাস্কে ঢাকা থাকে। রাস্তার কোথাও কোথাও ইটের অস্তিত্ব নেই, হাঁটতে গেলেই হোঁচট। সন্ধ্যায় আলোকসজ্জার ঘাটতির কারণে বইমেলার অনেক এলাকা ডুবে থাকে অন্ধকারে। আগত পাঠকের জন্য নেই বসার ব্যবস্থা। পর্যাপ্ত টয়লেট যেমন নেই, নেই খাবার পানির সুবিধাও। অনেক স্টলের সামনে নেই কার্পেট। বয়োবৃদ্ধ ও অসুস্থদের চলাচলের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত।
মেলা শুরুর দুসপ্তাহের মাথায় এত ‘নেই’ নিয়ে ক্ষোভ-বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেক প্রকাশক-পাঠক। স্টল বরাদ্দ দেওয়ার সময় অনেক সুবিধার কথা বলা হলেও কোনোটিরই দেখা মিলছে না। গ্রন্থমেলার অব্যবস্থাপনা নিয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি মেলা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান চাইছেন প্রকাশকরা।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘মেলার প্রথম সপ্তাহে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এরপর অভিযোগ আকারে তা উপস্থাপন করবো। এভাবে মেলা চলতে পারে না।’
স্টলের বিক্রয়কর্মীদের আইডি কার্ড পরার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অনেক কর্মীই এ নিয়ম মানছেন না। এসব নিয়ে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটিরও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। টিএসসি থেকে বইমেলায় ঢোকার প্রবেশ তোরণ ঘিরে উষ্মা প্রকাশ করেছেন অনেক পাঠক ও প্রকাশক। বইমেলার প্রবেশ তোরণ হিসেবে এটি মোটেও মানানসই নয়।
মেলায় অনেক বয়স্ক মানুষ আসছেন। পুরো চত্বর ঘুরে দেখার পাশাপাশি তারা একটু বিশ্রাম নিতে চান, তবে তার জো নেই। আয়োজকরা এ বিষয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করেননি। দর্শনার্থী সুবিধার জন্য মেলায় দুটি বড় ডিজিটাল স্ক্রিনে তথ্য প্রচারের কথা বলা হলেও তার চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ‘অ্যানালগ’ তথ্যকেন্দ্রে দায়িত্বরতরাও ‘ঠিকঠাক’ তথ্য দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে পাঠকের।
পর্যটন স্টলে খাবারের দাম ও মান নিয়েও ক্ষোভ আছে অনেকের। নি¤œমানের খাবার বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক দর্শনার্থী। প্রকাশকদের অনেকে নতুন বইয়ের মোড়ক উšে§াচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তমঞ্চের পাশে একটি অস্থায়ী মঞ্চে নতুন বইয়ের মোড়ক উšে§াচন করা হচ্ছে। এ মঞ্চটিকে ‘ছোট’ ও ‘দৃষ্টিকটু’ বলেছেন কয়েকজন লেখক। তাদের অভিযোগের তির মেলার নান্দনিকতার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানের দিকে। তরুণ এক লেখক তাই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, ‘বইমেলা আয়োজনে যাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তারা কীভাবে নান্দনিক মেলার আয়োজন করবে? তারা পুরোপুরি ব্যর্থ।’
এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশার কথা শোনালেন গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো এখনও সামনে। আমরা সবদিক নিয়েই সতর্ক আছি। মেলাকে নান্দনিক করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের। সমস্যাগুলোর কথা শুনেছি, দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।’

আবদুল হাকিম আবির

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০