Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:34 pm

নানা বীজের নানা পুষ্টি

সুস্থ থাকার জন্য আমরা কত কিছুই না খেয়ে থাকি। এসব খাবারের মধ্যে অনেক সময় বীজ পাওয়া যায়, যেগুলো আমরা ফেলে দিই। সেটা সবজি, ফল বা কোনো ফুলের বীজও হতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, এমন কিছু বীজ রয়েছে যেগুলো আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এসব বীজ ফেলে না দেওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তারা জানিয়েছেন, এগুলো মানবদেহ পুনর্গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এছাড়া বিভিন্ন রোগ যেমন হৃদরোগ বা ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষমতাও রয়েছে এসব বীজের। আসুন জেনে নিই এর কয়েকটি সম্পর্কে:
তরমুজ বীজ

তরমুজ বীজ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই পুষ্টিকর। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এ বীজ সহায়ক। এতে জিংক, ফাইবার ও আয়রন থাকে। আরও রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যামিনো এসিড আরজিনিন, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। জিংক বিভিন্ন ধরনের এনজাইম পরিচালনা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য প্রয়োজনীয়। এছাড়া তরমুজ বীজ উচ্চমাত্রার ভিটামিন বি, নায়াসিন ও ম্যাগনেসিয়াম-সমৃদ্ধ। এর বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী। তরমুজ খাওয়ার সময়ই এর বীজ খেতে পারেন। শুকিয়ে চিবিয়েও খেতে পারেন।

সয়াবিন বীজ

সয়াবিন বীজ অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এর বীজ সবজি কিংবা ডাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সয়াবিনের শুকনো বীজে রয়েছে প্রোটিন, চর্বি, শর্করা প্রভৃতি। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ। আঁশ থাকা সত্ত্বেও এত ক্যালরি রয়েছে এ বীজে।

পেঁপে বীজ

সঠিক স্বাস্থ্যের জন্য পেঁপে বীজ অত্যন্ত উপকারী। এ বীজে রয়েছে প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এছাড়া এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি, অ্যান্টিপ্যারাসাইটিক ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ালের প্রভাব আছে। এটি পেঁপের সঙ্গেই খেতে পারেন অথবা বীজগুলোকে একটু শুকিয়ে ভালো করে চূর্ণ করে নিন। সালাদ, স্যুপ বা কোনো সবজি রান্নায় দিয়ে খেতে পারেন।


কুমড়ো বীজ

কুমড়ো বীজ খেতে অনেকটা বাদামের মতো। এ বীজও পুষ্টিগুণে ভরা। কুমড়ো বীজে এক ধরনের উপকারী চর্বি রয়েছে, যা মস্তিষ্ক শিথিল রাখতে সাহায্য করে। এতে প্রচুর পরিমাণে জিংক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। ক্যানসার নিরাময়েও সহায়তা করে কুমড়ো বীজ।


কালোজামের বীজ

কালোজামের বীজে ওমেগা ৩, ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড থাকে। এছাড়া ফাইবার, ক্যারোটিনয়েড ও প্রোটিন থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এ বীজ খেলে হƒদরোগের ঝুঁকি কমে। এটি হজম সমস্যারও সমাধান করে। জাম বীজ রোদে শুকিয়ে এর খোলস ছাড়িয়ে সবুজ অংশটি বের করে নিন। এরপর সেগুলোকে আরও কয়েকদিন শুকিয়ে নিন। শুকানো হলে গুঁড়ো করে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।

লেবু বীজ

লেবু বীজে স্যালিসাইলিক এসিড থাকে, যা ব্যথা উপশমে ভূমিকা রাখে। তাই লেবু বা লেবুর শরবত খাওয়ার সময় কয়েকটি বীজ খেয়ে ফেললে কোনো ক্ষতি হবে না বরং বেদনানাশে কাজে দেবে।

ডালিম বা বেদানা বীজ

ডালিম বা বেদানা বীজ শরীরের জন্য খুব উপকারী। এ বীজে কোনো ক্যালরি নেই। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি, যা শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তাই ডালিমের রস চুষে বীজ ফেলে দেবেন না, বীজসহ খেয়ে ফেলুন।

কাঁঠাল বীজ

পুষ্টিগুণ বিচারে কাঁঠাল বীজও উপকারী। এর বীজে আয়রন বেশি থাকে, যা রক্তশূন্যতা দূর করে। কাঁঠাল বীজে থিয়ামিন ও রাইবোফ্লেবিন নামে দুটি উপাদান রয়েছে, এগুলো দেহে এনার্জি ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে আরও রয়েছে ক্যালসিয়াম, কপার, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা একাধিক রোগকে দূরে ঠেলে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।


তিসি বীজ

তিসি বীজে শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালরি, থায়ামিন, ম্যাগনিশিয়াম, ফসফরাস পটাশিয়াম, ম্যাংগানিজ, খাদ্য আঁশ প্রভৃতি উপাদান রয়েছে। তিসি বীজ ক্যানসারের বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়া হজমক্রিয়াকে উন্নত করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমাতেও বেশ কার্যকর।

সূর্যমুখী বীজ

সূর্যমুখী বীজও পুষ্টি জোগাতে বিশেষ সহায়ক। এটি আমাদের দেহের হাড় সুস্থ ও মজবুত রাখে। এ বীজে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, কপার প্রভৃতি উপাদান রয়েছে। বাতের ব্যথা দূর করা ও মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে। সূর্যমুখীতে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এ কারণে গ্যাস্ট্রিক-আলসার, দেহের চামড়ায় জ্বালাপোড়া, হাঁপানি প্রভৃতি রোগ দূর করতে সাহায্য করে।


তোকমা বীজ

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজন তোকমা বীজ। এর বীজ দেহ গঠনে বেশ উপকারী। তোকমা দিয়ে তৈরি শরবত বিপাকপ্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে ভালো কোলেস্টেরল তৈরি করে। দেহ সুস্থ রাখে।

কামরুন নাহার ঊষা