নিজস্ব প্রতিবেদক : এতদিন বিভিন্ন নগরী বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন ও অপরিকল্পিভাবে গড়ে উঠেছে। বর্তমান সরকার আধুনিক নগর গড়তে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নান্দনিক নগর গড়তে শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
বিশ্ব মান দিবস-২০১৭ উপলক্ষে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) আয়োজিত ‘নান্দিনিক নগরায়নে মান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন নগর হতে চামড়া শিল্প, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা নগর এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আধুনিক ও মানসম্পন্ন নগর গড়তে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআইও ভ‚মিকা রাখছে। সরকারের এরূপ কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে ঢাকা হচ্ছে কেন্দ্রবিন্দু।
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, নান্দনিক নগর বিনির্মাণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গুণগত মানের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নগর উন্নয়নে যেসব উপাদান প্রয়োজন হয় তার মান নির্ণয়ে বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে। নগরের যানজট সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, যানজট বিশ্বের সব দেশে রয়েছে। সরকার পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, পায়রা বন্দরসহ বেশ কিছু বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের চাপ কমবে এবং যানজট সমস্যা লাঘব হবে।
গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিএসটিআই মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসটিআই’র মহাপরিচালক মো. সাইফুল হাসিব, বিএসটিআই’র পরিচালক (মান) আ ন ম আসাদুজ্জামান আগত অতিথিদের উদ্দেশে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকা শহরে বহু মৌলিক সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের মনোজগতের পরিবর্তন আনতে হবে। স্মার্টভাবে সব কিছু চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩৬ হাজার এলইডি লাইট স্থাপন করা হয়েছে, যেগুলো মোবাইলের মাধ্যমে চালু, বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যখন সিটি মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তখন ৮৫ শতাংশ রাস্তা ছিল ভাঙাচোরা। এসব রাস্তার সংস্কারকাজ করা হয়। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ের দীর্ঘায়িত বর্ষার কারণে রাস্তাঘাটের কিছুটা অবনতি ঘটেছে, যা অচিরেই সংস্কার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য তাদের পক্ষে ভালোভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব ওয়াসার। জলাবদ্ধতা দূর করা গেলে ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটসহ অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে। বিএসটিআই একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান; আধুনিক নগর গড়তে বিএসটিআইসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন।
এফবিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, ব্যবসার প্রসারে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করার কোনো বিকল্প নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিনিয়োগকারী ও আমদানিকারকদের কাছে বাংলাদেশ এখন অনেক নিরাপদ স্থান হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্কীকৃতি পাচ্ছে। সব ক্ষেত্রে বিএসটিআই’র নজরদারি বৃদ্ধি পাচ্ছে। রফতানি বাণিজ্য অবারিত করতে কমন স্ট্যান্ডার্ড (মান) তৈরিতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে।
বিএসটিআই’র বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক অর্জনের কথা তুলে ধরে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. সাইফুল হাসিব বলেন, বিএসটিআই’র কয়েকটি ল্যাবরেটরি এবং প্রোডাক্টস সার্টিফিকেশন ও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সার্টিফিকেশন দেশ ও বিদেশের আন্তর্জাতিক সংস্থা হতে অ্যাক্রিডিটেশন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে; আবার বিএসটিআই’র ন্যাশনাল মেট্রোলজি ল্যাবরেটরির ছয়টি ল্যাব নরওয়েজিয়ান অ্যাক্রিডিটেশন এবং বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড থেকে অ্যাক্রিডিটেশন অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, অ্যাক্রিডিটেশন অর্জনের ফলে বিদেশে বিএসটিআই’র মানসনদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে রফতানি-বাণিজ্যে বাধা অপসারণের ক্ষেত্রে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাবরেটরিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।