ভারত মহাসাগরে সশস্ত্র জলদস্যুর কবলে পড়েছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের মালিকানাধীন ২৩টি জাহাজের একটি এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটি কবির গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসআর শিপিং লিমিটেডের। সমুদ্রগামী জাহাজের অবস্থান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ভেসেল ফাইন্ডারের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, জাহাজটি মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে ৪ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে রওনা হয়। ১৯ মার্চ জাহাজটি আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। মাপুতু থেকে রওনা হওয়ার চার দিন পর জলদস্যুদের কবলে পড়ে। উপকূল থেকে দূরে গভীর সাগরে সর্বশেষ অবস্থান দেখা যাচ্ছে জাহাজটির। এদিকে জাহাজটি মালিক কবির গ্রুপ সূত্রে জানা গেছে, ২৩ নাবিকের সবাই নিরাপদে আছেন বলে বার্তা পেয়েছেন তারা। জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। যোগাযোগ করা হলে নাবিক ও জাহাজটি উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করবেন। জলদস্যুরা কীভাবে জাহাজটি নিয়ন্ত্রণে নিল, সেটি নিয়ে কালক্ষেপণ করার সুযোগ নেই, যেখানে মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, মালিক পক্ষ আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যোগাযোগের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য এমন পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে সামাল দেয়ার দৃষ্টান্ত আছে ছিনতাই করা ‘এমভি আবদুল্লাহ’র মালিক পক্ষের। এর আগেও ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর আরব সাগরে ছিনতাই হয় কবির গ্রুপের জাহাজ এমভি জাহান মণি। তিন মাস জলদস্যুদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দর-কষাকষির পর বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণের টাকা দিয়ে মুক্ত হয়েছিল জাহাজটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় জলদস্যুরা প্রথমে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর উপকূলে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় নেয়ার পর জাহাজ মালিকের কাছে তারা মুক্তিপণ দাবি করে। কোম্পানির ওয়েবসাইট দেখে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করে। হাইজ্যাকের পর তারা জাহাজের মালিকের সংস্থার খোঁজ করে একটি প্রোফাইল তৈরি করে। তাদের মুক্তিপণের পরিমাণ কোম্পানির প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে। কোম্পানি যত ছোট, মুক্তিপণের দাবি তত কম। কোম্পানি যত বড়, মুক্তিপণের দাবি তত বেশি। যোগাযোগ প্রক্রিয়া শুরু হলে জাহাজে থাকা ২৩ নাবিককে উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে কেএসআরএম। আমরা আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে অপহরণকারীরা কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। যেহেতু একই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার পূর্ব-অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাই আশা করা যায়, মালিকপক্ষ আটক নাবিকদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। জলদস্যুদের যোগাযোগ শুরুর পর মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার করতে কমপক্ষে তিন মাস সময় প্রয়োজন হয়। তত দিন পর্যন্ত আমাদের নাবিকরা মানসিকভাবে যেন ভেঙে না পড়েন, সে চেষ্টা করতে হবে। সরকার বিশেষ করে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরকে তৎপর হতে হবে। জাহাজ ও নাবিকদের যাতে যথাসম্ভব দ্রুত নিরাপদে উদ্ধার করা যায়, সে লক্ষ্যে উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়িয়ে নাবিকদের সাহস জোগাতে হবে। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের পর্যাপ্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধপথ্য নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:45 pm
নাবিকদের উদ্ধারে ত্বরিত পদক্ষেপ নিন
সম্পাদকীয় ♦ প্রকাশ: