সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধে রকেট হামলার শিকার হয় ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’। এ হামলায় হাদিসুর রহমান নামে এক নাবিক নিহত হন। অন্য নাবিকরা প্রাণে বেঁচে গেলেও জাহাজটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে জাহাজটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ কারণে জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাবিকদের নিরাপদে রোমানিয়ায় সরিয়ে নেয়া হয়।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন চীনের ঋণ সহযোগিতায় ২০১৮ সালের বাংলার সমৃদ্ধিসহ মোট ছয়টি জাহাজ সংগ্রহ করে। আর সিঙ্গাপুরভিত্তিক ডেনমার্কের ডেল্টা শিপিং নামের একটি কোম্পানি বিএসসির কাছ বাংলার সমৃদ্ধি ভাড়া নিয়ে (চার্টার) জাহাজটি পরিচালনা করে। গত ২৬ জানুয়ারি জাহাজটি ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে ইস্পাত পণ্য নিয়ে যাত্রা করে সুয়েজ খাল হয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের এরগলি বন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে ২৯ ক্রু নিয়ে পৌঁছে।
সেখান থেকে সিরামিক তৈরির কাঁচামাল নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি জাহাজটির বন্দর ত্যাগ করার কথা ছিল। কিন্তু অলিভিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের পাইলট না পাওয়ায় জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি। আর ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হওয়ায় জাহাজটি বন্দরের বাইরে আসতে পারেনি। এই অবস্থায় জাহাজটি আরও ২২টির মতো জাহাজের সঙ্গে অলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়ে। এর মধ্যে ২ মার্চ জাহাজটি রকেট হামলার শিকার হয়। এতে জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান ঘটনাস্থলে নিহত হন। রকেট হামলায় জাহাজটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন ভয়াবহ অবস্থার মাঝে জাহাজের নাবিকেরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার আকুতি জানিয়ে একের পর এক পোস্ট দিচ্ছেন। তাদের অনেকেরই আত্মীয়-স্বজন নগরীর বিএসসি ভবনে এসে খোঁজ-খবর নেয়ার পাশাপাশি কান্নাকাটি করছেন।
জাহাজে থাকা নাবিকরা ভিডিও বার্তায় বলেন, ইউক্রেনের বর্তমান তাপমাত্রা শূন্যের কাছাকাছি। তাই পানি খুবই ঠাণ্ডা এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে
তুষারপাতের আশঙ্কা রয়েছে। শিপের হিটিং সিস্টেম কাজ করছে না। গরম পানির সিস্টেমও নষ্ট হয়ে গেছে। পুরো হিটিং সিস্টেম অচল হয়ে পড়েছে। জাহাজটির রেফ্রিজারেটর কাজ না করলে শুকনা খাবার ছাড়া বাকি তরকারি, মাছ, মাংস, দুগ্ধজাত খাদ্যসহ খাদ্যদ্রব্যের সবই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মূল জেনারেটর ফেল করায় এটির পরিবর্তে রান্নার কাজে ব্যবহার করার যে ইলেকট্রিক চুলা, সেটাও কাজ করছে না। অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যবহƒত সব পানি ব্রিজ থেকে নেমে শিপের বাসস্থানের এলাকাগুলোয় ছড়িয়ে রয়েছে। সবকিছু মিলে অচল জাহাজটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ওমর ফারুক তুহিন জানান, রকেট হামলায় জাহাজটি পুরোপুরি অচল হয়ে গেছে। এটির নেভিগেশন সিস্টেম ধ্বংস হয়ে গেছে। পাশাপাশি জাহাজটির মেইন পাওয়ার জেনারেটর কাজ করছে না। শুধু ইমার্জেন্সি জেনারেটর কাজ করছে। এতে জাহাজটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখাও সম্ভব হবে না। তাই জাহাজটিকে সমুদ্রপথে বের করে আনা সম্ভব হবে না। বর্তমানে জাহাজটি মেরামত করার মতো অবস্থায়ও নেই। যুদ্ধ থামার পর পরিস্থিতির ওপরই জাহাজটির ভাগ্য নির্ভর করবে।
উল্লেখ্য, গতকাল ইউক্রেনের ওডিসা বন্দরে রাশিয়ার হামলায় ডুবে যায় পানামার পতাকাবাহী হেল্ট নামক একটি জাহাজ। বিস্ফোরণের সময় জাহাজটিতে ছয় ক্রু অবস্থান করছিলেন। তবে ডুবে যাওয়ার আগে তারা সবাই জাহাজ থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। জাহাজটির মালিক এস্তোনিয়াভিত্তিক কোম্পানি ভিস্তা শিপিং এজেন্সি। বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া ন্যাটোর সদস্য এবং রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির সীমান্ত রয়েছে।