নামকরণ ও সেবাসামগ্রী ছাড়াই চালু হলো জাবির নতুন হল

ওসমান সরদার, জাবি : লোকবল সংকট, ডাইনিং-ক্যান্টিন চালু না হওয়া, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাবসহ নানাবিধ সমস্যায় ধুঁকছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নবনির্মিত আবাসিক হলগুলো। হাজারখানেক শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধাসংবলিত এ আবাসিক হলগুলোতে তাড়াহুড়ো করে শিক্ষার্থীদের তুলে দেয়া হলেও নামকরণ পর্যন্ত হয়নি।

জানা যায়, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ছয়টি আবাসিক হলের মধ্যে দুটির নির্মাণ কাজ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়। গত ২৩ জানুয়ারি ১৮নং ও ২১নং হলের চাবি তুলে দেয়া হয় প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ছায়েদুর রহমান ও ড. তাজউদ্দিন শিকদারের হাতে। পরে ছাত্রীদের আন্দোলনের মুখে ২৮ জানুয়ারি তড়িঘড়ি করে ছাত্রীদের হল খুলে দিতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ২৯ জানুয়ারি ছাত্রদের ২১নং হল খুলে দেয়া হয়।

হল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২১নং হল চালু হওয়ার পর অন্যান্য হল ও অফিস থেকে ৩৬ জন কর্মচারী নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে জয়েন করেছে ৩০ জন। মাত্র ৪ জন গার্ড পাহারায় নিয়োজিত আছেন। দশতলা এ হলের মোট ৯০টি টয়লেট পরিষ্কারের জন্য আছেন মাত্র তিনজন সুইপার। কমনরুম-টিভিরুমের জন্য কোনো কর্মচারী নেই। ডাইনিংয়ের জন্য কোনো নিয়োগ না হওয়ায় এখনও ডাইনিং চালু করা যায়নি। এমনকি লিফট পরিচালনায় অপারেটরও নিয়োগ দেয়া হয়নি। অপরদিকে ১৮নং ছাত্রীহলে মাত্র একজন হল সুপারসহ মোট ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ক্লিনার ৭ জন ও সুইপার ৬ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। মেয়েদের অন্যান্য আবসিক হলে যেখানে দুইজন করে হল সুপার ও প্রায় ৬০-৭০ জন কর্মচারী কাজ করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পট্রোলার অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ সেশনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বারিক বাজেটে নতুন হলের জন্য কোনো বরাদ্দ না থাকায় প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ পাওয়ার জন্য এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

প্রায় দুই মাস আগে চালু হওয়া ২১নং হল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষে ছাত্রদের জন্য পৃথক বিছানা থাকলেও কোনো চেয়ার-টেবিলের ব্যবস্থা করা হয়নি। ডাইনিং-ক্যান্টিন চালু না হওয়ায় হাজারখানেক শিক্ষার্থীকে বাইরের খাবারের দোকানের ওপর ভরসা করতে হয়। হলের করিডোর বা শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। দশতলা এ ভবনে উঠানামার জন্য মাত্র দু’টি লিফট কার্যকর আছে। সালাম-বরকত হল এলাকা থেকে নতুন হল পর্যন্ত রাস্তায় কোনো সড়কবাতির ব্যবস্থাও নেই। একই অবস্থা মেয়েদের ১৮নং হলের। রাস্তার পাশেই অবস্থিত এ হলটিতে জানালায় পর্দা লাগানোর স্ট্যান্ড না থাকায় বিড়ম্বনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উদ্বোধনের মাত্র দুই মাসের মাথায় অনেকগুলো কক্ষেই বাতি খুলে গেছে, দরজার কাঠ শুকিয়ে যাওয়ায় ছিটকিনি লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। নতুন চালু হওয়া ক্যান্টিনেও বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে ছাত্রীদের।

ছাত্রদের ১৮নং হলের প্রভোস্ট ড. মো. তাজউদ্দিন সিকদার বলেন, এভাবে লোকবল সংকট নিয়ে হল চালানো খুবই কষ্টসাধ্য। লোকবলের চাহিদা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। আপাতত আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে ৪০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার কথা চলছে।

২১নং ছাত্রীহলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ছায়েদুর রহমান বলেন, ইউজিসির নির্দেশনা অনুযায়ী লোকবল নিয়োগ হলে সংকট কেটে যাবে। কারিগরি ত্রুটির জন্য প্রকৌশল অফিস কাজ করে যাচ্ছে। 

উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. আহসান হবীব বলেন, হলগুলোর কারিগরি যেকোনো ত্রুটির জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামী এক বছর সব ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। অভিযোগ পেলেই আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করছি।

রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) অফিস আদালতে আসবাবপত্র ক্রয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় টেবিল-চেয়ার ক্রয় করা যাচ্ছে না। ইউজিসি প্রতিটি হলের জন্য ১৩ জন লোকবল নিয়োগের অনুমতি দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০