ডিজেলচালিত বেসরকারি ছয় বিদ্যুৎকেন্দ্র

নামমাত্র উৎপাদনেও ক্যাপাসিটি চার্জ ১৭৫০ কোটি টাকা

ইসমাইল আলী: তিন বছর আগে এক হাজার মেগাওয়াটের ছয়টি ডিজেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমোদন দেয় সরকার। চাহিদা না থাকায় বছরের বেশিরভাগ সময়ই এসব কেন্দ্র বসে থাকছে। গত অর্থবছর কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার (প্লান্ট ফ্যাক্টর) মাত্র চার শতাংশ ব্যবহার করা হয়, যদিও কেন্দ্রগুলোর জন্য গুনতে হয় উচ্চ হারে ক্যাপাসিটি চার্জ। ফলে ডিজেলচালিত এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ও পড়ছে অনেক বেশি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ডিজেলচালিত ছয় কেন্দ্রের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার হলে বছরে প্রায় ৭২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অথচ গত অর্থবছর এ কেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন করা হয় মাত্র ৩২ কোটি ১৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ। নামমাত্র উৎপাদন করা হলেও এ কেন্দ্রগুলোর জন্য গত অর্থবছর এক হাজার ৭৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে পিডিবিকে। আর এ ছয় কেন্দ্রের গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ৭১ টাকা ১৪ পয়সা।

ডিজেলচালিত ছয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বড়টি এপিআর এনার্জি। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাজধানীর অদূরে কেরানীগঞ্জের পানগাঁওয়ে স্থাপন করা হয়েছে। ৩০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটিতে বছরে সর্বোচ্চ ২১৬ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। অথচ গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে মাত্র সাত কোটি ২১ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা সক্ষমতার প্রায় তিন শতাংশ। যদিও কেন্দ্রটির জন্য এ সময় ৫২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে পিডিবিকে। এতে গত অর্থবছর কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়েছে ইউনিটপ্রতি ৮৮ টাকা ৯০ পয়সা।

ডিজেলচালিত দুটি কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ২০০ মেগাওয়াট করে। এর মধ্যে একটি হলো সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জি। এ কেন্দ্রটিতে গত অর্থবছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় মাত্র দুই কোটি ১৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। যদিও কেন্দ্রটিতে বছরে সর্বোচ্চ ১৪৪ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। অর্থাৎ সক্ষমতার এক শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় কেন্দ্রটিতে। যদিও গত অর্থবছর কেন্দ্রটির জন্য ৩৫১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়েছে পিডিবিকে। এ সময় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ১৮০ টাকা ৬৭ পয়সা।

২০০ মেগাওয়াটের অপর কেন্দ্রটি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে। বাংলা ট্র্যাকের (প্রথম ইউনিট) এ কেন্দ্রটিতেও বছরে সর্বোচ্চ ১৪৪ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যদিও ২০২০-২১ অর্থবছর এ কেন্দ্রটিতে মাত্র তিন কোটি ৯৬ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা সক্ষমতার দুই শতাংশ। নামমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও গত অর্থবছর কেন্দ্রটির জন্য ৩৫০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় পিডিবিকে। এ সময় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ১০৫ টাকা ৭২ পয়সা।

ডিজেলচালিত অপর তিনটি কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট করে। এর মধ্যে বাংলা ট্র্যাকের (দ্বিতীয় ইউনিট) কেন্দ্রটিতে নির্মাণ করা হয়েছে যশোরের নওয়াপাড়ায়। সর্বোচ্চ ক্ষমতায় উৎপাদন করলে কেন্দ্রটি থেকে বছরে ৭২ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তবে গত অর্থবছর এ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় ১২ কোটি ২৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা সক্ষমতার প্রায় ১৪ শতাংশ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়েছে ৩১ টাকা ৩৮ পয়সা। আর এ কেন্দ্রটির জন্য গত অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় ১৭৬ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

১০০ মেগাওয়াটের অপর দুটি কেন্দ্র বহুজাতিক এগ্রিকো লিমিটেডের। এর মধ্যে এগ্রিকো এনার্জি সল্যুশন কেন্দ্রটি ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের ওরাহাটিতে। গত অর্থবছর এ কেন্দ্রটিতে মাত্র তিন কোটি ৭১ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এতে, যা সক্ষমতার চার শতাংশ। তবে কেন্দ্রটির জন্য গত অর্থবছর ১৭৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়। এ সময় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ৬৪ টাকা ১৩ পয়সা।

এদিকে কেরানীগঞ্জের ব্রাহ্মণগাঁওয়ে রয়েছে এগ্রিকো পাওয়ার সল্যুশন কেন্দ্রটি। মাত্র দুই কোটি ৮৫ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে এ কেন্দ্রে, যা সক্ষমতার প্রায় তিন শতাংশ। তবে কেন্দ্রটির জন্য গত অর্থবছর ১৬৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয়। এ সময় কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ৭৬ টাকা।

জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. বেলায়েত হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, বছর পাঁচেক আগে সেচ মৌসুম ও রোজা একই সময়ে শুরু হওয়ায় হঠাৎ বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ফলে সে সময় লোডশেডিং আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পায়। আর কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে আসতে দেরি হচ্ছিল। তাই দ্রুত চাহিদা মেটাতে ডিজেলচালিত ছয়টি কেন্দ্রের লাইসেন্স দেয়া হয়। পাঁচ বছরের জন্য এ কেন্দ্রগুলোর লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে তিন বছরের বেশি পেরিয়ে গেছে। তাই দুই বছরের মধ্যে এ কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জের বোঝা কমে যাবে।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে মেরিট অর্ডার ডেসপাচ অনুসরণ করা হয়। এক্ষেত্রে কম ব্যয়ের কেন্দ্রগুলোকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাধান্য দেয়া হয়। আর ডিজেলচালিত কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যয় এমনিতেই বেশি। ফলে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেন্দ্রগুলো চালানো হয় না। এতে কেন্দ্রগুলো বছরের বেশিরভাগ সময় বসিয়ে রাখা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০