অনেক কোম্পানি ক্যাটেগরি ধরে রাখার জন্য এক থেকে দুই শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ বছরের মতো আর কখনও এমনটা দেখা যায়নি। অর্থাৎ ক্যাটেগরি ধরে রাখতে এক বা দুই শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে পার পেয়ে গেল। তাহলে মুনাফার টাকা কোথায় গেল? একটিভ ফাইনের ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৯২ পয়সা। সেখানে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে দুই শতাংশ। এ যদি হয় স্পন্সরদের লভ্যাংশ দেওয়ার নমুনা। তাহলে বিনিয়োগকারীর আস্থা আসবে কীভাবে? এটা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
মাহমুদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিইও সালেহ আহমেদ, এবিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট নুরুল আমিন এবং অর্থনীতিবিদ ড. আহমদ আল কবীর।
সালেহ আহমেদ বলেন, চলতি বছরের শুরুতে বাজার একটু ইতিবাচক ধারায় ছিল। আর সারা বছরই বাজার নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এখন সূচক প্রায় এক হাজার পয়েন্ট কমে গেছে। বছরের শুরুতে যেভাবে বাজার এগিয়ে ছিল তা বিবেচনা করলে বাজার আরও ভালো হওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে বাজার আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, একটিভ ফাইনের ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৯২ পয়সা। সেখানে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে দুই শতাংশ। এ যদি হয় স্পন্সরদের লভ্যাংশ দেওয়ার নমুনা। তাহলে বিনিয়োগকারীর আস্থা আসবে কীভাবে। অর্থাৎ যেখানে প্রায় ইপিএস তিন টাকা হয়েছে, সেখানে মাত্র দুই শতাংশ দিচ্ছে। এটা আসলে কাম্য নয়।
নুরুল আমিন বলেন, পুঁজিবাজারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আস্থা ও অর্থ। এখানে শেয়ার কেনাবেচার ক্ষেত্রে অর্থ অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। যদি আস্থা না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবে। তা-ই আগে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে। তাহলে বাজারে অর্থ আসবে। শোনা যাচ্ছে, বাজারে ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে। আসলে বাজারের বর্তমান পরিস্থিতে এ টাকা বিনিয়োগ করলে বাজার ভালো হয়ে যাবে মনে করি না। কারণ বাজারে আস্থা, সুশাসন ও সামগ্রিক অর্থনীতির গতি প্রবাহের ওপর বাজারের ভালো-মন্দ নির্ভর করে। এখন দেশের অর্থনীতি নিয়ে ভালো খবর শোনা যাচ্ছে না। আমদানি ও রপ্তানি নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। এনবিআরের রেভিনিউ এ প্রান্তিকে প্রায় ২০ হাজার কোটি ঘাটতি রয়েছে। যখন এ ধরনের খবর জনগণ পায় তখন পুঁজিবাজার নিয়েও বিনিয়োগকারীরা চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ পুঁজিবাজার অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, অনেক কোম্পানি তাদের ক্যাটেগরি ধরে রাখার জন্য এক থেকে দুই শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। এ বছরের মতো আর কোনো বছর এমনটা দেখা যায়নি। অর্থাৎ ক্যাটেগরি ধরে রাখতে এক বা দুই শতাংশ লভ্যাংশ দিয়ে পার পেয়ে গেলেন। তাহলে টাকা কোথায় গেল? একেই কী বলে সুশাসন। এর জবাবদিহি কে করবে। বাজারে আস্থা কীভাবে আসবে। বিনিয়োগকারী কী এক বা দুই শতাংশ লভ্যাংশের জন্য বিনিয়োগ করতে আসে। আসলে এটা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া কিছুই না।
ড. আহমেদ আল কবীর বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনীতির বেশকিছু সূচক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। ইতোমধ্যে রেমিট্যান্সের গ্রোথ বাড়ানোর জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এ খাতে দুই শতাংশ নগদ প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। ফলে হুন্ডির প্রভাব কমে যাবে বলে আশা করি। রপ্তানির গ্রোথ আরও বাড়ানো হবে। আবার দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাত তারল্য সংকটসহ আরও বিভিন্ন কারণে নাজুক অবস্থানে রয়েছে। এর মূল কারণ খেলাপি ঋণ। তাই এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ