নারায়ণগঞ্জে দুই ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ, দীর্ঘ যানজট

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দুই ভাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি করে পুলিশের সামনে বিক্ষোভ করেছেন তারা। ‘খুনিদের ফাঁসি চাই’ বলে সেøাগানও দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা।

গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর এলাকা অবরোধ করে মানববন্ধন করা হয়। এতে মহাসড়কের একপাশে প্রায় আড়াই কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলার কাঁচপুর পাঁচপাড়া এলাকায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই ভাইকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত দুই ভাই ওই এলাকার মৃত সানাউল্লাহ মিয়ার বড় ছেলে আসলাম সানি (৪৮) ও ছোট ছেলে শফিকুল ইসলাম রনি (৩৫)। এ ঘটনায় মেজো ছেলে রফিকুল ইসলাম (৪০) গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চাচাতো ভাই মোস্তফা ও তার পরিবার সদস্যরা পলাতক রয়েছেন।  

এই ঘটনার জের ধরে গতকাল দুপুরে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন। জুমার নামাজ শেষে দোষীদের ফাঁসির দাবিতে কাঁচপুরের নয়াবাড়ীসংলগ্ন এলাকার মহাসড়ক (ঢাকা-চট্টগ্রাম) অবরোধ করেন স্থানীয়রা। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একপাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় সোনারগাঁ থানা পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে। পরে পৌনে দুই ঘণ্টা পরে বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেন।

মানববন্ধনে ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী পুলিশের সামনে সেøাগান দেন, ‘আসলাম-রনির খুনিদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই,’ ‘খুনিদের চামড়া তুলে নেব আমরা,’ ‘একটা একটা খুনি ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর।’

মানববন্ধনে নিহত আসলাম সানির স্ত্রী সোনিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার মতো কেউ যেন বিধবা না হয়। তাই আমরা সবাই খুনিদের ফাঁসি চাই। সবাইকে আমার পাশে এসে দাঁড়ানোর অনুরোধ করছি।’

আহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘এই খুনিরা এখনও অধরা। তারা বাইরে থাকলে কারও জীবনের নিশ্চয়তা নেই। তারা যেকোনো সময়ে আমাদের ওপরে হামলা করতে পারে।’

এ সময় হত্যার ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করে এবং মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানায়।

মহাসড়ক থেকে আন্দোলন তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সোনারগাঁ থানার ওসি মাহবুব আলম বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে আমরা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছি। এরই মধ্যে এ ঘটনায় একজন এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য আমরা কাজ করছি। যত দ্রুত সম্ভব আমরা তাদের আইনের আওতায় আনব। তবে এটি হাইওয়ে (মহাসড়ক), অনেক অ্যাম্বুলেন্সে রোগী রয়েছে। সেসব পরিবহন আটকে আছে। সুতরাং আপনারা সড়ক ছেড়ে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করেন। এটি আপনাদের কাছে অনুরোধ রইল।’ এ সময় বিক্ষুব্ধরা দোষীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেন।

কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি এসএম আবুল কাশেম আজাদ বলেন, ‘বিক্ষুব্ধরা মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। কাঁচপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধরা মহাসড়ক ত্যাগ করলে যানজট কমতে শুরু করে।’

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের পরে সোমবার বিকালে নিহতদের মেজো বোন শামসুন নাহার (৪০) বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নিহতদের চাচা মহিউদ্দিন ও চাচাতো ভাই মোস্তফাসহ পরিবার সদস্যদের ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে এই ঘটনায় এজাহারনামীয় ৬ নম্বর আসামি মোর্শেদা বেগমকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের দিন ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত আসামিদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেন এলাকাবাসী। একইভাবে পরের দিন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে মশাল জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০