Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:20 pm

নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ নিয়ে প্রশ্ন মালিকদের

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ: শীতলক্ষ্যা নদীতে জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির পর নারায়ণগঞ্জ থেকে সব পথে বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে লঞ্চ চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মালিকরা। রোববারের ওই দুর্ঘটনার পর গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতটি রুটে চলাচলকারী লঞ্চ বন্ধের কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌ-দুর্ঘটনা রোধে ছোট লঞ্চ চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে এই আদেশ দেয়া হয়েছে।’

এরপর দুপুরে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থা (যাত্রী পরিবহন) নারায়ণগঞ্জ জোনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সংগঠনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল।

নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতটি রুটে চলাচলকারী সব লঞ্চের সার্ভে রিপোর্ট রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই বিআইডব্লিউটিএ ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক রফিকুল ইসলাম মৌখিকভাবে স্থানীয় বিআইডব্লিউটির মাধ্যমে গতকাল সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ থেকে সব রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন।’

বাদল জানান, সাতটি পথে মোট ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। তিনি দ্রুত নারায়ণগঞ্জ থেকে সব রুটে চলাচলরত লঞ্চ পুনরায় চালুর অনুমতি দেয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গত রোববার দুপুর ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদরের সৈয়দপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যায় সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন মালবাহী জাহাজ রূপসী-৯ পেছন থেকে চাপা দিলে ডুবে যায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এম এল আফসার উদ্দিন।

গতকাল সকালেই লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে আটটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন চারজন। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা উদ্ধারকাজে অংশ নেন। লাশের খোঁজে তল্লাশি এখনও চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদীর প্রস্থ কমে গেছে। শিল্পকারখানার কারণে ভারী জাহাজ চলাচল শতভাগ বেড়েছে। এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ট্রাফিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি বিআইডব্লিউটিএ। যার কারণে প্রায়ই নৌ-দুর্ঘটনা ঘটছে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা, সহ-সভাপতি অহিদুজ্জামান, নুরুল আমিন কাজল ও সদস্য আলমগীর মিয়া।

দুর্ঘটনায় মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনায় একটি মামলা হবে।’

রূপসী-৯-এর চাপে এমএল আফসার উদ্দিন লঞ্চটি যখন তলিয়ে যাচ্ছিল, কাছের আরেকটি লঞ্চ থেকে সেই দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন রাকিব আল রাজু নামে একজন। তিনি ওই ভিডিও ফেসবুকে দিলে তা ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, রূপসী-৯ জাহাজটি একপাশ থেকে চলন্ত লঞ্চটির ওপর চেপে বসেছে। লঞ্চের আতঙ্কিত যাত্রীরা নদীতে লাফিয়ে পড়ছেন। এ অবস্থা চলে প্রায় ২৫ সেকেন্ড। একপর্যায়ে লঞ্চটি ডুবে যায়। রাকিব আল রাজু বলেন, লঞ্চটি চাপা পড়ার পরও জাহাজের গতি কমাননি চালক।

কয়েক ঘণ্টা পর মুন্সীগঞ্জের হোসেনদি এলাকা থেকে রূপসী-৯ ও এর মাস্টারকে আটক করে নৌ-পুলিশ। তবে গতকাল সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি বলে নৌ-পুলিশের ওসি মনিরুজ্জামান জানান।

এ ঘটনা তদন্তে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। লঞ্চডুবির ঘটনায় জরুরি যোগাযোগের জন্য বিআইডব্লিউটিএ একটি ‘হটলাইন’ খুলেছে; যার নম্বর-১৬১১৩। বিআইডব্লিউটিএ’র উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠ তলায় ৬১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ন্ত্রণ কক্ষে এই হটলাইন চালু করা হয়েছে। এছাড়া আরও দুটি টেলিফোন নম্বর দেয়া হয়েছে। সেগুলো হলো +৮৮০২২২৩৩৫২৩০৬; মোবাইল ফোন- +৮৮০১৯৫৮৬৫৮২১৩।

মিজানুর বলেন, এই লঞ্চ দুর্ঘটনা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য এই হটলাইন যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।