নারীদের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার আগ্রহ কমছে

মো. মাসুম বিল্লাহ: গত এক যুগে দেশে আনুষ্ঠানিক আর্থিক লেনদেনের গতিবিধিতে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। একসময় আনুষ্ঠানিক আর্থিক লেনদেনের প্রধান মাধ্যমই ছিল তফসিলি ব্যাংকে গ্রাহকের খোলা হিসাব। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস)। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে নারী গ্রাহকদের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার আগ্রহ অনেক হ্রাস পেয়েছে। এর বিপরীতে তাদের মধ্যে মোবাইল

আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত স্যাম্পল ভাইটাল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের (এসভিআরএস) ২০২২ সালের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের ২৪ দশমিক দুই শতাংশ নারীর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজ নামে হিসাব ছিল। ২০২২ সালে এ অনুপাত নেমে আসে ২১ দশমিক ছয় শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে নারীদের মধ্যে ব্যাংক হিসাব খোলার হার হ্রাস পেয়েছে দুই দশমিক ছয় শতাংশ। এর বিপরীতে নারীদের মধ্যে মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলার হার কিছুটা বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালে মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের ২৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ নারীর হিসাব ছিল। ২০২২ সালে এটি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৮ দশমিক আট শতাংশ।

এদিকে নারীদের ক্ষেত্রে মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাব খোলার হার বৃদ্ধি পেলেও পুরুষের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান উভয় ক্ষেত্রেই হিসাব খোলার হার হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২১ সালে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের পুরুষদের মধ্যে ব্যাংক হিসাবধারীর অনুপাত ছিল ৩১ দশমিক আট শতাংশ। ২০২২ সালে এটি হ্রাস পেয়ে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে। অন্যদিকে ২০২১ সালে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের পুরুষদের মধ্যে মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হিসাবধারীর অনুপাত ছিল ৫৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ২০২২ সালে এটি নেমে আসে ৫৫ দশমিক ছয় শতাংশে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক ও মোবাইল আর্থিক সেবা উভয় ক্ষেত্রেই হিসাবধারীর অনুপাত কমেছে। ২০২১ সালে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যাংক হিসাবধারীর অনুপাত ছিল ২৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২২ সালে এ হার হ্রাস পেয়ে ২৬ দশমিক দুই শতাংশে নেমে আসে। একই সঙ্গে মোবাইল আর্থিক সেবার হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালে সামগ্রিকভাবে ১৫ বছরের ঊর্ধ্বের ৪২ দশমিক ছয় শতাংশ মানুষের এমএফএস হিসাব ছিল। ২০২২ সালে এটি হ্রাস পেয়ে ৪১ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে আসে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত ছয় বছরে যে হারে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে ব্যাংক হিসাব বৃদ্ধি পায়নি। এ সময়ের ব্যবধানে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা ৩০০ শতাংশের মতো বৃদ্ধি পেলেও ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশের নিচে। ২০১৮ সালে দেশে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা ছিল ছয় কোটি ৭৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৬৮টি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এটি বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২২ কোটি ৮৬ হাজার ১৮৬টি। অন্যদিকে ব্যাংক হিসাবের ক্ষেত্রে দেখা যায়, ২০১৮ সালে বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকদের মোট হিসাবের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২১১টি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে এটি বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৮৪টিতে উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ, ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার চেয়ে তিন গুণ বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এমএফএস হিসাবের সংখ্যা। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, মানুষ ধীরে ধীরে ব্যাংক হিসাবের তুলনায় এমএফএস হিসাবের দিকে বেশি ঝুঁকছে। আর এক্ষেত্রে নারীরা সবচেয়ে বেশি এগিয়ে।

খোঁজ দিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে এমএফএসের মাধ্যমে রেমিট্যান্সের অর্থ দেশে আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে। এর ফলে ব্যাংক হিসাবের বিকল্প মাধ্যম হিসেবে এমএফএসের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। আর রেমিট্যান্সের অর্থের সুবিধাভোগীদের বড় অংশই নারী। সে কারণে নারীদের মধ্যে এমএফএস হিসাব খোলার প্রবণতা বাড়ছে এবং ব্যাংকে হিসাব খোলার হার হ্রাস পাচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০