Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:53 pm

নারীরা সহযোদ্ধা-সহযোগী, সেই বিশ্বাস রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে নানা ক্ষেত্রে মেয়েরা এখন নেতৃত্বের পর্যায়ে এগিয়ে এলেও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ না হওয়ায় নিজের উদ্বেগের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কেবল আইন করে যে এ সমস্যার সমাধানও হবে না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

গতকাল বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে জিনিসটা সব থেকে এখন আমাদের জন্য পীড়াদায়ক, সেটা হচ্ছে মেয়েদের ওপর সহিংসতা। আমরা যদিও আইন করে দিয়েছিÑযেমন আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন করেছি, আমরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করেছি, আমরা পারিবারিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন করে দিয়েছি; শুধু আইন করলে হবে না, এখানে মানসিকতাটাও বদলাতে হবে। চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং বিশ্বাসটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বিশ্বাসটা করতে হবে যে নারীরা শুধু ভোগের বস্তু নয়, নারীরা সহযোদ্ধা। নারীরা সহযোগী। সহযাত্রায় চলতে হবে। সমান অধিকার দিতে হবে। এটা হলো বাস্তবতা।’

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে পাঁচ নারীকে চলতি বছর রোকেয়া পদক দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। তার পক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা পদক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও অনেক নারী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সমাজের নানা ক্ষেত্রে তারা অবদান রেখে চলেছেন। সরকার প্রতি বছর তাদের সম্মানিত করবে।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জš§ ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তার অবদান স্মরণ করে প্রতিবছর এ পুরস্কার দেয় বাংলাদেশ সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে বেগম রোকেয়া আমাদের আদর্শ। কারণ সমাজের অচলায়তন ভেদ করে তিনি যদি শিক্ষার আলো না জ্বালতেন, তাহলে আজকে আমরা যতদূর এগোতে পেরেছি, এটা পারতাম না। তিনি আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের আলোর পথে যাত্রা শুরু করিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমি মনে করি, অনেকটাই আমরা সে স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।’

রংপুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার বাড়িটি সংরক্ষণ করে সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং রংপুরে তার নামে বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘দেশটা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সব ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিমান ও হেলিকপ্টারও নারীরা চালাচ্ছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের নারী অফিসার পুলিশ এবং আমাদের সেনাবাহিনী বা বিমানবাহিনীর মেয়েরা অত্যন্ত চমৎকার কাজ করছে। এখন আমাদের নারীদের অংশগ্রহণটা আমাদের স্বশস্ত্র বাহিনীতে বা পুলিশবাহিনীতে, শান্তিরক্ষা মিশনে নারীদের বেশি চায়। এটা হলো বাস্তবতা।’

নারীরা এখন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় গিয়েও যে কাজ করছে, সে কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটাই সব থেকে বড় কথা যে পুরুষরা যেটা পারে, নারীরা তার থেকে আরও ভালো পারে, বেশি পারে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই এবং সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।’

এ সময় রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যা-ই হোক, আমি বেশি বলব না, শেষে আবার দেখা যাবে যে, পুরুষরা… শেষে আমার ভোট না কমে যায় আবার। আমাদের তো ইলেকশন করে আসতে হয়, আমাদের সবদিকে লক্ষ রাখা দরকার।’

বলা হয় বাংলাদেশের সমাজ পুরুষশাসিত; কিন্তু মেয়েদের ছাড়া পুরুষ চলতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন পুরুষদের কাছে রাখেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘সেই মায়ের পেটে জš§ নিতে হয়, বোনের হাত ধরে হাঁটা শেখে, বড় হয়ে স্ত্রীর ওপর নির্ভরশীল থাকে, বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেলে তো কন্যাসন্তানই বেশি দেখে, সে-ই যতœ নেয় বেশি।’

নারীর উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের নানা উদ্যোগের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।