বৈশাখি সাজে মেয়েরা এখন শুধু লাল-সাদাতেই সীমাবদ্ধ নন। পছন্দের তালিকায় যুক্ত হয়েছে আনন্দের প্রায় সব রঙ। ফ্যাশন হাউজগুলোও নানা রঙে তাদের পণ্যের পসরা সাজিয়েছে।
বৈশাখি উৎসবের পোশাকে বাঙালিয়ানা তুলে ধরতে ফ্যাশন হাউজগুলো রঙের পাশাপাশি নানা কারুকাজ ব্যবহার করেছে। নারীর পোশাকের নকশায় ফুটে উঠেছে চিরায়ত বাংলার আবহ। কচি সবুজ রং প্রাধান্য পেয়েছে অনেক পোশাকে। কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে লিনেন, মসলিন ও সিল্ক। সেই সঙ্গে কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নকশিকাঁথা, ব্লকপ্রিন্ট, ফুল, কলস, হাতপাখা ও পাখিসহ নানা নকশা।
ফ্যাশন-সচেতন নারীর মনোযোগ রয়েছে শাড়ি আর কুর্তিতে। এছাড়া ব্লাউজের ডিজাইনে হাই নেক, বোট নেকসহ ফ্রন্ট-সাইট ও বেক-সাইটে রয়েছে ‘ভি’ আকৃতির কাটিং। সিøভলেস ও কনুই পর্যন্ত হাতার ব্লাউজের সঙ্গে ফুলহাতার ব্লাউজও হবে ফ্যাশনেবল। ফুলের নকশার ব্লাউজের সঙ্গে নেটের হাতা ব্লাউজও ভালো চলছে।
আড়ংয়ের কথাই ধরুন। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ছোট-বড় সব বয়সী মেয়ের জন্য নতুন ডিজাইনের নানা পণ্য নিয়ে এসেছে ওই প্রতিষ্ঠান। তাদের থ্রি-পিসে যোগ হয়েছে প্রায় ২০টি ডিজাইন। রঙেও আছে ভিন্নতা। কটন, লিনেন, সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক ও ক্যাশ মিলন কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। নানা ডিজাইনের মধ্যে রয়েছে ব্লক ও স্ক্রিন প্রিন্ট। এসব
থ্রি-পিসের দাম রাখা হয়েছে, দুই হাজার থেকে ছয় হাজার ৫৫০ টাকা। থ্রি-পিস ছাড়া রয়েছে প্রায় ১৫০ ডিজাইনের ওয়ান পিস। আড়ংয়ে নানা নকশার বৈশাখি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। শাড়িগুলোয় নকশা হিসেবে রয়েছে আলপনা, কলকা, টাইডাই, অ্যাপলিক, ফ্লাওয়ার, স্ক্রিন প্রিন্টসহ হাতের নানা কাজ। এছাড়া ভিন্নভাবে বৈশাখকে মাতিয়ে তুলতে মেয়েদের শাড়িতে যোগ করা হয়েছে গামছা প্রিন্টের শাড়ি। এসব শাড়িতে প্রাধান্য পেয়েছে লাল, সাদা, হলুদ, কমলা ও মেরুল। সব শ্রেণির ক্রেতার চাহিদা বিবেচনায় রেখে শাড়িগুলোর মূল্য রাখা হয়েছে, ৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
ফ্যাশন হাউজ ইয়োলোতেও চলছে বৈশাখি আয়োজন। মেয়েদের জন্য নানা ধরনের থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, টুপিস, টপস ও ফতুয়াসহ বিভিন্ন ডিজাইনের বৈশাখি শাড়ি রয়েছে এ ব্র্যান্ডের। বৈশাখের আয়োজনে থ্রি-পিসের প্রায় ২০টির মতো ডিজাইন রাখা হয়েছে। সাদা, লাল, সবুজ ও হলুদ ব্যবহারই বেশি চোখে পড়েছে। ইয়োলোর ডিজাইন বেশ নজরকাড়া। ঋতুর সঙ্গে মিল রেখে কটন, লিলেন ও বিসকস কাপড় বেছে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে কুর্তির প্রায় ১০টি নতুন ডিজাইন যোগ করা হয়েছে। এছাড়া নানা রঙের নতুন ডিজাইনের প্রায় ১৫টি শাড়ি এনেছে ইয়েলো। এসব শাড়ির দাম ১৮০০ থেকে শুরু করে ২৬০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।
বৈশাখি আয়োজনে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কাজ করছে ফ্যাশন হাউজ রঙ। আমাদের ঐতিহ্যবাহী হাঁড়ি, নকশীপাখা, বাংলার পটচিত্র, রিকশা মোটিফ, ঐতিহাসিক কান্তজী মন্দিরসহ টেরাকোটার মতো মহামূল্যবান মোটিফকে পোশাকের বর্ণিল অলংকরণ হিসেবে ব্যবহার করে ফ্যাশনকে তারা সমৃদ্ধ করেছে।
রঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলেন, ‘বর্তমানে আকাশ সংস্কৃতির নামে যে আধুনিকতার অস্থিরতা বিরাজ করছে সামগ্রিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে, তা আমাদের সংস্কৃতি নয়। যার ফলে আমরা আকাশ সংস্কৃতির নামে ভুল পথ দেখাচ্ছি পরবর্তী প্রজš§কে, যা আমাদের কাম্য নয়। এ কারণে আমরা পোশাকে নকশার গ্রাফিক্যাল পটভূমিতে রহিম বাদশা ও রূপবান, বেহুলা, তাসের ঘর, ভাত দে, বেদের মেয়ে, কসাই, ছুটির ঘণ্টা, এমিলির গোয়েন্দা বাহিনী, নিষ্পাপ, লাইলী মজনু, মালকা বানু, বিনি সুতার মালা, গোলাপী এখন ট্রেনে, ওরা ১১ জন, অরুণ-বরুণ, কিরণ-মালা, পদ্মানদীর মাঝি, কালজয়ী এমন অসংখ্য ছবির খণ্ড খণ্ড স্থিরচিত্র ফুটিয়ে তুলেছি’।
বৈশাখের পোশাকে শতভাগ বাঙালিয়ানার থিম, মোটিফ, নকশা এনেছে ফ্যাশন ব্র্যান্ড সেইলর। পোশাকের প্যাটার্ন ও কাট বৈচিত্র্যের সঙ্গে যোগ হয়েছে এমব্রয়ডারি ও ডিজিটাল প্রিন্টেড ভ্যালু অ্যাডিশনসহ বিভিন্ন ছাপচিত্র। মেয়েদের বৈশাখি পোশাকে রয়েছে থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, কুর্তি ও শাড়ি। পোশাকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার হয়েছে রঙের ছটা, পাখির অবয়ব ও ফুল ও প্রকৃতির নানা সৌন্দর্য। সেইলরের হেড অব ব্র্যান্ড রেজাউল কবির জানান, ‘শতভাগ বাঙালিয়ানাকে পোশাকের মোটিফ করেছে সেইলর। গত ৩ এপ্রিল আমাদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আমরা কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দিচ্ছি।’