নারীর প্রজনন ও পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম

নারীর হরমোনের অসুখের মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) তুলনামূলক বেশি হয়। বয়ঃসন্ধি ও রিপ্রোডাক্টিভ বয়সে (১৫ থেকে ২৫ বছর) এটা দেখা যায়। ক্রনিক অ্যানোভিউলেশন আর ডিসোভিউলেশন (ডিম্বাণু তৈরিতে সমস্যা) থেকে হওয়া ইনফার্টিলিটির মূল কারণ এটি। মেনস্ট্র–য়াল সাইকেলের সময় সাধারণত এক বা একাধিক ডিম্বাণু বেরোয়। একে বলা হয় ওভিউলেশন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ডিম্বাণু বেরোয় পিরিয়ডস শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ পর। পিসিওএসের ক্ষেত্রে ডিম্বাণু ঠিক সময় বেরোয় না, সেগুলো ওভারি বা ডিম্বাশয়ে থাকে। অনেকগুলো ডিম্বাণু জমে থাকার ফলে ওভারিতে কিছু গঠনগত পরিবর্তন দেখা যায়। ফলে পলিসিস্টিক ওভারির সৃষ্টি হয়। পিসিওএসে আক্রান্ত হলে কয়েকটি উপসর্গ দেখা যায়। অনিয়মিত পিরিয়ডস, ইনফার্টিলিটি, ওবেসিটি, ব্রণ, সারা দেহে অতিরিক্ত লোম, চুলপড়ার সমস্যা, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট এবং ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজমের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে হার্ট ও ব্লাড ভেসলের অসুখ, ওভারিতে অসংখ্য ছোট সিস্ট হতে পারে।

কাদের হয়

অসুখের কারণগুলো এখনও সম্পূর্ণ জানা যায়নি। তবে যাদের পরিবারে মা, দাদি ও বোনের এই অসুখ আছে, বংশগত কারণে তাদের পিসিওএসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। পিসিওএস শরীরে অতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোনের (যেসব হরমোন পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী) প্রভাব লক্ষ করা যায় ও শরীরে ইনসুলিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যাদের পিসিওএস আছে, তাদের পিরিয়ডস কম হওয়া, পিরিয়ডস পিছিয়ে যাওয়া বা পিরিয়ডস না হওয়ার সমস্যা দেখা যায়। তাছাড়া ওজন বেড়ে যাওয়া, দেহে অতিরিক্ত ও অবাঞ্ছিত চুল, ব্রন বা সন্তান ধারণে অক্ষমতাও এর অন্যতম লক্ষণ। আলট্রাসাউন্ডে আক্রান্ত নারীদের সাধারণত ওভারির সাইজ বড় থাকে, যেখানে অনেক ছোট সিস্ট হয়। রক্ত পরীক্ষা করলে হাই ইনসুলিন লেভেল, হাই কোলেস্টেরল আর পুরুষ হরমোনের আধিক্য দেখা যায়।

 

জটিলতা

ওভিউলেশনে আক্রান্ত অনেক নারীর এন্ডোমেট্রিয়াম (জরায়ুর ভেতর পৃষ্ঠদেশের মিউকাস আবরণের নাম) বা ইউটেরাসের লাইনিং পুরুষ্টু হয়ে যায়। ইউটেরাসের লাইনিং মোটা হয়ে গেলে অস্বাভাবিক ব্লিডিংয়ের সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন এটা চললে প্রি-ক্যানসারাস চেঞ্জ দেখা দিতে পারে, এমনকি জরায়ুর ক্যানসারও হতে পারে। নিয়মিত ওভিউলেশন বা ডিম্বপাত না হলে গর্ভধারণ করতেও গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। যেসব নারীর পিসিওএস থাকে তাদের কোমরে অতিরিক্ত মেদ, হাই কোলেস্টেরল, হাই ব্লাড প্রেশার, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সসহ ডায়াবেটিস হতে পারে। সব লক্ষণই হার্টের অসুখের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।

 

চিকিৎসা

পিসিওএসের যেহেতু কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তাই এই অসুখে যেন আক্রান্ত হতে না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পিসিওএসে আক্রান্ত বেশিরভাগ নারীই অতিরিক্ত ওজনের। এজন্য সঠিক ডায়েট ও নিয়মিত এক্সারসাইজ করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ তা ওভিউলেশনকে নিয়মিত করে, ফার্টিলিটির সম্ভাবনা বাড়ায়, ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা

দূরে রাখে আর অ্যান্ড্রোজনের মাত্রাকে

কম করে।

ক্লোমিফিন সাইট্রেট বা লেট্রোজোলের মতো কিছু ওষুধের দ্বারা ওভিউলেশন করানো যায়। সেগুলো কার্যকরী না হলে ডিম্বাণুর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গোনাডেট্রপিন ইনজেকশন দেওয়া হয়। যাদের পিসিওএস আছে, তারা এই ওষুধ ব্যবহার করলে খেয়াল রাখতে হবে যেন এর মাত্রা সঠিক থাকে। ওভিউলেটিং ড্রাগ ও দুই ইন্ট্রা ইউটেরাইন ইনসেমিনেশন এই দুটি মিলিয়ে চিকিৎসা করালে ২০ শতাংশ পিসিওএস রোগী কনসিভ বা গর্ভধারণ করতে পারেন।

মেটফরমিনের মতো ইনসুলিন সেনসিটাইজিং ওষুধ শরীরকে ইনসুলিন ব্যবহার করতে সাহায্য করে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। কিছু ক্ষেত্রে পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের মধ্যে ওভিউলেশন বাড়াতে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে। ল্যাপারোস্কোপিক ওভারিয়ান ড্রলিং (এলওডি) চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যার ফলে সাময়িকভাবে ওভিউলেশনের সম্ভাবনা দেখা যায়। বায়ো চিকিৎসার ক্ষেত্রে শেষ সুযোগ আইভিএফ। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাজ না হলে অবিলম্বে আইভিএফের (টেস্টটিউব বেবি) সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। যে কোনো সাইকেলে প্রেগনেন্সি হওয়ার সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা দিতে পারে আইভিএফ।

 

শাহজাদা সেলিম

সহকারী অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০