গাজী শরীফা ইয়াছমিন: পুরো বিশ্বের সব দেশের নারীরাই কমবেশি সহিংসতার শিকার হন। বর্তমানে কভিড মহামারির পর থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা আরও বৃদ্ধির কারণে নারীর অবস্থা আরও নাজুক হয়ে উঠেছে। নারীর প্রতি সহিংসতার খুব লম্বা ইতিহাস রয়েছে এবং এরকম সহিংসতার মাত্রা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছিল। এমনকি আজও বিভিন্ন সমাজে এগুলোর মাত্রা ও ঘটনার ধরন বিভিন্ন হয়ে থাকে।
সহিংস অপরাধগুলো যেগুলো প্রধানত বা কেবলই নারী বা বালিকাদের ওপরেই করা হয়, সেগুলোকেই নারীর প্রতি সহিংসতা বলে ধরা হয়। ঘরে-বাইরে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মস্থলে, গণপরিবহন প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর প্রতি সহিংসতার মূলে কাজ করে অপরাধকে অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার প্রবণতা, অপরাধী হিসেবে নিজেকে মেনে না নেওয়া এবং ভিকটিম ব্লেমিং কালচার। সহিংস আচরণের প্রতি পুরুষের অজ্ঞতা ও নির্লিপ্ততা নারী নির্যাতনের সবচেয়ে বড় কারণ।
জাতিসংঘের ডিকলারেশন অন দ্য ডিকলারেশন অব ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন থেকে বলা হয়, ‘সহিংসতা হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে নারী ও পুরুষের মধ্যকার ঐতিহাসিক অসম ক্ষমতা সম্পর্কের প্রকাশ এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে প্রধান সামাজিক কৌশলগুলোর মধ্যে একটি, যার দ্বারা নারীদের পুরুষের তুলনায় অধীনস্থ অবস্থানে জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয়’।
নারীর প্রতি সহিংসতাকে কয়েকটি বৃহৎ শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এগুলোর মধ্যে ব্যক্তির দ্বারা সহিংসতা ও রাষ্ট্রের দ্বারা সহিংসতা উভয়ই রয়েছে। সহিংসতার কোনো কোনো ধরন আছে, যা ব্যক্তির দ্বারা ঘটে যথা-ধর্ষণ, গৃহ নির্যাতন, যৌন হয়রানি, প্রজননগত জোর-জবরদস্তি, কন্যা শিশুহত্যা, লিঙ্গভিত্তিক গর্ভপাত, প্রসবকালীন সহিংসতা, উচ্ছৃঙ্খল জনতার দ্বারা সহিংসতা বা দাঙ্গা, রীতি বা আচারগত চর্চা যেমন-সম্মান রক্ষার্থে হত্যা বা অনার কিলিং, যৌতুক সহিংসতা বা পণ মৃত্যু, নারী খৎনা, অপহরণপূর্বক বিবাহ বা জোরপূর্বক বিবাহ। আবার কিছু ধরনের সহিংসতার কর্তা হচ্ছে রাষ্ট্র, যেমন- যুদ্ধকালীন যৌন সহিংসতা, সংঘর্ষের সময় যৌন সহিংসতা এবং যৌন দাসত্ব, বাধ্যতামূলক নির্বীজন, জোরপূর্বক গর্ভপাত, পুলিশ ও কর্তৃত্বকারী কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দ্বারা সহিংসতা, পাথর ছুঁড়ে হত্যা বা চাবুক মারা। আবার অনেক ধরনের যৌন সহিংসতা সংঘটিত হয় সংগঠিত অপরাধচক্রের দ্বারা, যেমন- নারীপাচার এবং জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি প্রভৃতি।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী পারিবারিক পরিসরে স্বামী বা ঘনিষ্ঠজন কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হন। এ নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নির্যাতন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ২০২০-এর মে মাসে একটি জরিপে জানা যায়, দেশের ২৭টি জেলায় এপ্রিল মাসে চার হাজার ২৪৯ জন নারী এবং ৪৫৬টি শিশু পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছে।
প্রতি বছর বাংলাদেশে হাজার হাজার নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। বিভিন্ন গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ধর্ষণের মতো নিকৃষ্ট অপরাধ করার পরও অধিকাংশ ধর্ষকই অনুতপ্ত হয় না; বরং ধর্ষণের শিকার নারীকেই অভিযুক্ত করে নিজের অপরাধের পক্ষে সাফাই গেয়ে থাকে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এই ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৩ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোরীরাই সংখ্যায় বেশি।
২০২০ সালের মার্চে কভিড মহামারির কারণে সাধারণ ছুটি শুরুর পর থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার সংখ্যা ও মাত্রা বাড়তে থাকে। এসব নির্যাতনের ঘটনায় দেশের বড় বড় বেসরকারি সংস্থা থেকে শুরু করে মানবাধিকার সংস্থা দেশব্যাপী নানা গবেষণা করেন। এসব গবেষণার তথ্য বলছে, কভিডকালে এ সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণাসহ নানা ধরনের অপরাধ ও বাল্যবিয়ে বেড়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক দেশের ৫৯ জেলার ১০ লাখ নারীর অংশগ্রহণে করা এক জরিপে জানায়, লকডাউন চলাকালে নারীর ওপর সহিংসতার মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। জরিপ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪০ হাজার নারী পারিবারিক সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ নারী প্রথমবারের মতো নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সংস্থাটি জানিয়েছে, জরিপে দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের চেয়েও মানসিক নির্যাতনের মাত্রা বেশি। স্কুল বন্ধ থাকায় বাল্যবিয়েও থেমে থাকেনি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, জানুয়ারি ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২৪৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হন।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য উদ্যোগগুলোর ভেতর রয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্প, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি সংস্থাসগুলোর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা হ্রাস করা এবং সেবা কার্যক্রম জোরদারকরণ করা। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ডিএনএ ল্যাবরেটরি, ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার, ভাউ ডাটাবেইজ, ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার।
নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরণে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং ইউনিসেফের সহায়তায় দেশের ১০টি জেলা এবং ৩টি উপজেলায় নারীবান্ধব হাসপাতালের কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশ ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন চালু করেছে। এই ডিভিশন মূলত ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নির্যাতন ও হয়রানির শিকার নারী ও শিশুদের আইনগত সহায়তা প্রদান করে, তাদের সংশ্লিষ্ট আইন সম্পর্কে সচেতন করে, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার তদন্ত কার্যক্রম আরও ফলপ্রসূ করেতে সহায়তা করে, হটলাইনের মাধ্যমে প্রাপ্ত অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে কুইক রেসপন্স টিমের গমন ও ভিকটিমের আইনি সহায়তা প্রদান, নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধের তথ্য সংরক্ষণ করাসহ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সব অপরাধ বিভাগের নারী ও শিশুর প্রতি সংঘটিত অপরাধ সংশ্লিষ্ট মামলা তদন্তে সমন্বয় সাধন ও সহায়তা প্রদান করে থাকে।
২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পুলিশের তত্ত্বাবধানে ১০টি এনজিওর সমন্বয়ে ঢাকার তেজগাঁও থানায় প্রথম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার চালু করা হয়। পরবর্তীতে ২০১১ সালে রাঙামাটিতে দ্বিতীয় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হয়। এই সেন্টারগুলোয় সহিংসতার স্বীকার নারী ও শিশুকে আইনি সেবা, চিকিৎসা, মানসিক সহায়তা, সহযোগী এনজিও থেকে আইনগত ও পুনর্বাসন সেবা প্রদান করে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় পর্যায়ে একটি করে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হবে।
২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত নারীর ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতার উদ্দেশে ১১টি মন্ত্রণালয় এবং ৯টি ইউএন সংস্থার মাধ্যমে জয়েন্ট প্রজেক্ট অন ভায়লেন্স এগেইনিস্ট উইমেন বাস্তবায়িত হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মূল কার্যক্রম হলো পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা, আইনগত পরামর্শ দেয়া, সালিসি মীমাংসা করা, নারী নির্যাতনের ঘটনার তথ্যানুসন্ধ্যান, মামলা পরিচালনা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, সহিংসতার শিকার নারীর নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ‘রোকেয়া সদন’ এ থাকার ব্যবস্থাসহ পুনর্বাসন করা। এর পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানটি আইন সংস্কার কার্যক্রমে সহায়তা প্রদান, তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ, গণমানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা, মতবিনিময় সভা, আলোচনা সভা আয়োজন এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারী নির্যাতনের ঘটনায় ৬১টি সাংগঠনিক জেলা শাখা এবং ২০৫১ তৃণমূল শাখার মাধ্যমে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রশাসনের কাছে স্মারক প্রদান, আন্দোলনমুখী কার্যক্রমসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এসবই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের বাস্তবায়িত কার্যক্রম।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি মহিলা আইনজীবীদের অধিকার ও অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে নারী ও শিশুদের, বিশেষত সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে থাকে। সমিতি প্রতিরোধ, সুরক্ষা, পুনর্বাসন ও পুনঃএকত্রীকরণÑএই চারটি পদ্ধতি অনুসরণ করে এই সমিতি কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও যশোরে এ সমিতির চারটি আশ্রয়কেন্দ্র আছে।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব প্রোগ্রাম (মেজনিন)-এর মূল উদ্দেশ্য হলোÑজনসমাগমে মেয়েদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ করা। এ লক্ষ্যে দেশের উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি কমিউনিটি ফোকাসড প্রোগ্রাম তৈরি করেছে, যেখানে যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করার জন্য ১২ হাজার শিক্ষার্থী (মেয়ে ও ছেলে) এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সচেতন করা। এছাড়া এ ইস্যুতে কর্মরত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি ও সংস্থার সমন্বয়ে আন্দোলনের জোট বা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা এবং তা সচল রাখা।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অন্যতম কর্মসূচি হলো নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সেবা, স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা এবং সহিংসতার শিকার নারীর আইনি সেবা ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা, নারী নেতৃত্ব তৈরি ও নারীর অংশগ্রহণ, সহিংসতার শিকার নারীর পুনর্বাসন করা। এই ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে কাজ করে এবং তহবিল ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে। এভাবে প্রতিষ্ঠানটি নারীদের পাশে থাকে সবসময়।
দেশ থেকে এসিড সহিংসতা ক্রমান্বয়ে দূরীকরণ ও হ্রাস এবং এসিড সহিংসতার শিকার ভিকটিমদের সমাজে মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করার জন্য এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ) কাজ করে যাচ্ছে। এসিড দগ্ধ ভিকটিমদের উন্নতমানের সেবা প্রদানের জন্য ২০ শয্যাবিশিষ্ট ‘ঠিকানা’ নামে হাসপাতাল রয়েছে। এএসএফের হটলাইন নম্বরে (০১৭১৩০১০৪৬১) যোগাযোগ করলে সহজেই পাওয়া যায় সেবা সংক্রান্ত তথ্য ও সহায়তা।
দেশে নারী নির্যাতন বন্ধে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, নারী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম বা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ বা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ সংক্ষেপে আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত সেফ প্রকল্প ২০১০ সাল থেকে রাজধানীর মহাখালী, মোহাম্মদপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় মেরী স্টোপস ক্লিনিকের আশপাশের ১৯টি বস্তিতে কাজ করছে। এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রকল্প এলাকায় নারী নির্যাতনের হার কমানো, বাল্যবিয়ে ও অল্পবয়সে গর্ভধারণের হার কমানো এবং নারীদের মাঝে জš§নিরোধক ব্যবহার বৃদ্ধি করা, তরুণী ও কিশোরীদের মধ্যে নির্যাতন থেকে মুক্ত থাকার অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীদের ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ বা অন্য জায়গা থেকে আইনি সেবা নিতে উৎসাহিত করা।
বাংলাদেশে অক্সফামের উদ্যোগে ২০০৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরের ‘আমরাই পারি’ ক্যাম্পেইন যাত্রা শুরু হয়। ক্যাম্পেইনের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে, নারী নির্যাতনের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করার মধ্য দিয়ে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশকে নারীর জন্য অধিকতর নিরাপদ স্থানে পরিণত করা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে বলেন, সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা আমাদের জন্য পীড়াদায়ক তা হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আইন করেছি। কিন্তু, শুধু আইন করলেই এসব বন্ধ করা যাবে না, মানসিকতার পরিবর্তনই নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধ করতে পারে। সামাজিক অচলায়তন ভেঙে সব বাধা অতিক্রম করেই নারীদের এগিয়ে যেতে হবে।
আইনের সঠিক প্রয়োগের পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে তাদের সুরক্ষার জন্য পুরুষের আচরণগত ও মানসিক পরিবর্তন নিয়ে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরে আলোচনা করতে হবে। এর জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা ও কর্মতৎপরতা প্রয়োজন। নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত পরিবর্তনে একযোগে কাজ করতে হবে। কাজটি কঠিন, সন্দেহ নেই; তবে কাজটি শুরু করাটা খুব জরুরি। কারণ যেকোনো কাজের একটি ভালো শুরুর অর্থই কাজটির প্রায় অর্ধেক হয়ে যাওয়া। কাজেই প্রয়োজন শুধু আমাদের এগিয়ে যাওয়া আর সচেতন হওয়া নিজের এবং অন্যের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য।
পিআইডি নিবন্ধ