নারী উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি: জামানত হিসেবে বিবেচনার ফের নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণ গ্রহণে নারী উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত নিশ্চয়তাকে (গ্যারান্টি) জামানত হিসেবে বিবেচনার জন্য ফের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পঋণের ক্ষেত্রে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সহায়ক জামানত ছাড়াই ১০ লাখ টাকার বেশি ঋণ বিতরণের কথাও বলা হয়েছে।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৭ জানুয়ারি এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সে নির্দেশনা গত এক বছরেও যথাযথ পালন না হওয়ার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গতকাল জারি করা প্রজ্ঞাপনে আগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় নারী উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত গ্যারান্টিকে জামানত হিসেবে বিবেচনা করে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়া ঋণ সুবিধা সহায়ক জামানত ব্যতিরেকে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে অর্থায়ন প্রাপ্তি সহজতর করতে এ নির্দেশনা পরিপালনে আরও অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।

এছাড়া কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র খাতে নতুন উদ্যোক্তা পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্যোগের প্রকৃতি ও উৎপাদিত পণ্য এবং সেবার বাজার বিবেচনান্তে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সহায়ক জামানতবিহীন প্রয়োজনে ১০ লাখ টাকার অধিক ঋণ বিতরণ করা যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের নিজস্ব সম্পদ বলতে তেমন কিছুই থাকে না। ফলে ঋণের জামানত দিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হন তারা। আবার ব্যাংকগুলোও ব্যক্তি-জামানতের বিপরীতে ঋণ দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করে। তাই তারা নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী হয় না।

সূত্র জানায়, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এগুলো হচ্ছে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের মোট তহবিলের ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখার বিধান, স্কিমের আওতায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১০ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং ব্যক্তি গ্যারান্টির বিপরীতে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা। এছাড়া এ বিষয়ে একটি পৃথক ডেস্ক (উইমেন এন্টারপ্রেনারস ডেডিকেটেড ডেস্ক) স্থাপন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাদের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ১০ শতাংশ ঋণ না দিলে পুনঃঅর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়া এবং তাদের ঋণ মঞ্জুরি প্রক্রিয়া সহজ এবং দ্রুত করতে দলিলাদি সম্পাদনে স্বল্প আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব উদ্যোগ নেওয়ার পরও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার লক্ষমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, নারী উদ্যোক্তারা তাদের কাছে ঋণের জন্য আসেন না। অন্যদিকে নারী উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তারা ঋণ পান না; বরং হয়রানির শিকার হন।

জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ৯ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা রয়েছেন। যার মধ্যে ১৭ শতাংশই নারী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের তহবিল নারীদের অর্থনৈতিক মূলধারায় অধিক হারে সম্পৃক্ত করতেই গঠন করা হয়েছে। যাতে নারীর ক্ষমতায়নও বাড়বে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ায় তেমন উৎসাহ দেখা যায় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, ব্যাংকগুলো নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ দিতে চায় না। তারা সিকিউরিটি ও গ্যারান্টার চায়। এক্ষেত্রে জমি, ফ্ল্যাট কিংবা ব্যাংকে রাখা এফডিআর সিকিউরিটি হিসেবে নেওয়া হয়। পাশাপাশি গ্যারান্টার হিসেবে নিজের স্বামী বা আত্মীয়-স্বজনের সই নেওয়া হয়। সাধারণত একজন উদ্যোক্তাকে যতটা ঋণ দেওয়া হয়, তার বিপরীতে শতভাগের বেশি সিকিউরিটি দাখিল করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন সিকিউরিটি হয় ১১০ শতাংশ। তবে বেশিরভাগ ব্যাংকই ১৫০ থেকে ১৮০ শতাংশ পর্যন্ত সিকিউরিটি চায়। কিন্তু বেশিরভাগ নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে সিকিউরিটির এই শর্ত পূরণ সম্ভব হয় না। ফলে ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও ব্যবসার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যেতে পারছে না। বিষয়টি অনুধাবন করেই এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পুনরায় জারি করা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০