Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:57 pm

নারী উন্নয়নে নবজাগরণ ঘটেছে বাংলাদেশে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি সেক্টরে নারীদের সফল অংশগ্রহণে বাংলাদেশের নারী অগ্রযাত্রায় নবজাগরণ ঘটেছে।

তিনি বলেন, ‘নারীদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই; কারণ নারীরা গ্রামীণ পর্যায়েও প্রতিটি সেক্টরে এগিয়ে যাচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক সভায় দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদে ৪৮টি সংরক্ষিত আসনে ১ হাজার ৫৫৩ জন নারী আবেদন করেছেন। এটি প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশে নারী উন্নয়নে একটি নবজাগরণ ঘটেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকশর মধ্যে ৪৮ জন নারীকে খুঁজে বের করা তাদের জন্য কঠিন কাজ। তবে মনোনয়ন না পেলে হতাশ না হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য মাতৃস্নেহে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমি নিজেও মাতৃস্নেহে দেশ গড়তে চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে নারীদের মধ্যে যে চেতনা এসেছে এবং নারী নেতৃত্ব যেন তৃণমূল থেকে শুরু হয় স্থানীয় সরকারে সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। প্রাইমারি স্কুলে ৬০ শতাংশ নারীর চাকরির ব্যবস্থা করেছি। খেলাধুলায়ও নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী একজন নারী বিবি খাদিজা (রা.) এবং মেয়েরা মায়ের জাতি, সেটাও মনে রাখতে হবে। কাজেই মেয়েদের অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেইÑএ ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সচেতন। আজকে আমাদের গ্রামপর্যায় পর্যন্ত নারীরা পিছিয়ে নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ করে নারীদের ট্রেনিংসহ তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সব রকমের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। কেননা, আমরা আমাদের দেশটাকে আরও উন্নত করতে চাই। সে ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করতে পারলেই কেবল সেটা সম্ভব হবে।

তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যারা দরখাস্ত করেছেন তাদের অনেকেই জানেন হয়তো তারা পাবেন না। কিন্তু নিজের অস্তিত্বটাকে জানান দেয়া যে আমি আছি। আমরাও যোগ্য, আমরাও পারি। হ্যাঁ আমি এটা নিজেও বিশ্বাস করি সকলেই যোগ্য, কেউ অযোগ্য নয়। আমি এখনও বলব যদি কেউ এখনও পেছনে পড়ে থাকেন তাদের টেনে আনার দায়িত্ব কিন্তু এই রাজনৈতিক নেতৃত্বের। আর সেখানে আমাদের এ বোনরাই পারবে, কাউকে আমরা পেছনে ফেলে রেখে চলব না। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যাব।’

তার সরকারের নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘আমাদের নারীদের কিন্তু অনেক দায়িত্ব রয়েছে। আমি জানি এতজনের মধ্যে মনোনয়ন দিতে পারব মাত্র ৪৮ জনকে। কিন্তু যে যেখানে আছেন তাদের নেতৃত্ব দেয়ার যে আকাক্সক্ষা সেটা মনোনয়ন না পেলেও যেন হারিয়ে না যায়।’

তিনি বলেন, ‘এটা ধরে রাখতে হবে। এটা ধরে রেখেই কিন্তু নিজের স্থানটা নিজের করে রাখতে হবে। একটা কথা মনে রাখতে হবে কেউ কিন্তু জায়গা করে দেয় না, জায়গাটা করে নিতে হয়। জায়গাটা করে নিতে হবে এবং সেভাবে সংগঠন তৈরি করতে হবে, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। একদম জনগণের কাছে তৃণমূলে গিয়ে তাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। যেন ভবিষ্যতে আমরা সরাসরি নির্বাচনে আরও বেশি মহিলা প্রার্থী করতে পারি।

সরকারপ্রধান বলেন, এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে মেয়েরা সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়েছে। দীর্ঘ লাইন করে দাঁড়িয়ে তারা ভোট দিয়েছে। এক সময় কিন্তু এ অবস্থাটা ছিল না। আজকে আওয়ামী লীগকে মানুষ ভোট দিচ্ছে, এই যে পরিবর্তনটা এসেছে এর কারণ কাজ করার মাধ্যমে মানুষের মন জয় করার জন্য। কাজেই আপনাদেরও নেতৃত্ব দিতে হলে কে কী বানিয়ে দেবে সে আশায় বসে থাকলে হবে না। নিজের যোগ্যতায়, নিজের কাজ করে, নিজের রাস্তা দিয়েই সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে আমাদের স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা দিয়ে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। যার কার্যক্রম শুরু হবে ২০২৬ সাল থেকে। সে ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। আমরা ঘোষণা দিয়েছি, ৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠবে, এটা নারী-পুরুষ সবাই সমানভাবে, আমাদের যুবসমাজকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সেভাবে তৈরি করা, স্মার্ট সরকার হবে, ইকোনমি স্মার্ট হবে, আমাদের সমাজটাকে স্মার্ট হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। অর্থাৎ বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের জনগণ কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাকবে না। সব ক্ষেত্রে অগ্রগামী থাকবে।

তিনি এ সময় গণভবনে আগতদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আজি বসন্ত আমার গণভবনের বাগান ফুলে ফুলে শোভিত।