নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে ১৮ জুলাই থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ১৮ জুলাই বেলা ১১টায় মহাখালীতে রেললাইন অবরোধের পর সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে গত সাত দিনে রেলের টিকিট রিফান্ড ও বিভিন্ন জায়গায় হামলায় রেলের ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর রেল ভবনে রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম এ তথ্য জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে কয়েকটি জায়গায় ট্রেনে ও স্টেশনে রাখা বিভিন্ন যন্ত্রাংশে হামলা করা হয়েছে। এ কারণে এখনও ট্রেন চালানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’ তিনি জানান, পরিস্থিতি বুঝে ট্রেন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘ট্রেন না চলার কারণে টিকিট রিফান্ড করতে হচ্ছে। এটা সবচেয়ে বড় ক্ষতি। এখন পর্যন্ত ১৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি টিকিট রিফান্ড করা হয়েছে যাত্রীদের। এছাড়া পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল মিলিয়ে রেলের মোট ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৩ লাখ ৮ হাজার টাকা।’ মন্ত্রী বলেন, সহিংসতায় হামলাকারীরা কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেসের তিনটা কোচে আগুন দিয়েছে। এছাড়া সোনার বাংলা, কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পারাবত এক্সপ্রেসের বিভিন্ন কোচে হামলা করে ভাঙচুর করেছে। বিভিন্ন স্টেশনে বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ, সিগন্যাল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে রেললাইন উপড়ে ফেলার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে রেল যোগাযোগ বন্ধ হলে পরদিন শুক্রবার রেল থেকে জানানো হয় পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত রেল চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে গত বুধবার (২৪ জুলাই) জানানো হয়, ঢাকার আশপাশে স্বল্প দূরত্বে ট্রেন চলবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-জয়দেবপুর, ঢাকা-টাঙ্গাইল এসব দূরত্বে কমিউটার ও লোকাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে। এই ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার সকালে অনেকেই কমলাপুর স্টেশনে ভিড় করেন। তবে দুপুর ১২টার সময় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে রেলওয়ে।
কমলাপুর স্টেশনমাস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, যাত্রী নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, রেলের ইঞ্জিন ও কোচের সংখ্যা কম। তারপরও রেল সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। এখন এই মুহূর্তে ট্রেন পরবর্তী পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করেই চলাচল করবে। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয়েছে। রেল চাচ্ছে না যে এমন কিছু হোকÑযাতে আবার আগুনের মধ্যে ঠেলে দিতে হয়। প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে রেল চলাচল।
এদিকে ট্রেন চলাচল কবে নাগাদ শুরু হবে, সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী। বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা জানান।
তিনি বলেন, ট্রেন চলাচলের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ট্রেন চালানো কোনো বিষয় নয়, বিষয়টি হচ্ছে নিরাপত্তা। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে মন্ত্রী, সচিব এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে কবে থেকে ট্রেন চলবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।