এইচএম সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সিলেটে সৃষ্ট বন্যার ধাক্কা এবার লাগছে নিকটস্থ জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ইতোমধ্যে উপজেলার নি¤œাঞ্চল হয়ে গেছে প্লাবিত। তলিয়ে গেছে এলাকার অনেক রাস্তাঘাট। বিশুদ্ধ খাবার পানি, গোখাদ্যসহ শুকনো খাবারে দেখা দিয়েছে মারাত্মক সংকট। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। অর্ধশতাধিক পরিবার ঠাঁই নিয়েছে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি হাওরবেষ্টিত এ উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই বাড়ছে প্লাবিত হওয়া এলাকার সংখ্যা। ইতোমধ্যেই প্রায় ৩০ কিলোমিটার আধাপাকা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রায় ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবেষ্টিত, কয়েকটির ভেতরেও পানি ঢুকেছে।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় বিশুদ্ধ খাবার পানি, গোখাদ্যসহ শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে মানুষের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, তারা সরকারিভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বুড়িশ্বর, ভলাকুট, গোয়ালনগর, ধরমণ্ডল, গোকর্ণ ও চাপরতলা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নের শ্রীঘর এসএসডিপি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ওইসব আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় ৬৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার প্রায় ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে পড়েছে জলমগ্ন। অনেক বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেও ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। এতে করে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষা অফিস থেকে কোনো আদেশ না পাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে পানি ভেঙে স্কুলে যাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. ইকবাল মিয়া বলেন, উপজেলার ১২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭০টি বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি ওঠেছে। কিছু বিদ্যালয়ের ভেতরেও পানি ঢুকেছে। স্কুল বন্ধ করার জন্য সরকারিভাবে কোনো নির্দেশনা আসেনি। আদেশ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার আবু সাঈদ তারেক বলেন, ‘বন্যায় উপজেলার প্রায় তিন হাজার হেক্টর বোনা আমন ধানিজমির ধান পানির নিচে সম্পূর্ণ এবং এক হাজার হেক্টর ধানিজমি আংশিক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাছাড়া তলিয়ে গেছে আট হেক্টর শাকসবজির জমি। তবে দ্রুত পানি নেমে গেলে ধানের কোনো ক্ষতি হবে না।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোনাব্বর হোসেন বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। আমরা প্রতিদিন বন্যাকবলিত এলাকায় যাচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় এখন পর্যন্ত ৬৯টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।