নাসির গ্রুপ: রাজস্ব ফাঁকি বিষয়ে এনবিআরে অভিযোগ

মাসুম বিল্লাহ ও শরিফুল ইসলাম পলাশ: নতুন প্রকল্প স্থাপনে সরবরাহকারী ও ঠিকাদারদের বিল প্রদানে অগ্রিম আয়কর এবং মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আদায় করা হয়নি। এতে কয়েকশ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। রাজস্ব ক্ষতির বিষয়টি ধামাচাপা দিতে আসল কাগজপত্র গোপন রেখে নকল কাগজপত্র ও ব্যাংক বিবরণী এনবিআরে জমা দেওয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ উঠেছে নাসির গ্রুপের বিরুদ্ধে। খোদ কোম্পানির দায়িত্বরত কর্মকর্তা পরিচয়ে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) লিখিতভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে এনবিআর। তবে ওই চিঠির বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

নাসির গ্রুপের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পরিচয়ে এনবিআরের আয়কর নীতির সদস্য বরাবর লিখিত অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়েছে। তবে চিঠিতে অভিযোগকারীর নামোল্লেখ করা হয়নি। এনবিআর চেয়ারম্যান, কর পরিদর্শন পরিদফতরের মহাপরিচালক, এনবিআরের প্রশাসন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের সদস্য, ঢাকার কর অঞ্চল-১০-এর কমিশনার ও ঢাকার কর অঞ্চল-২-এর কমিশনারের কার্যালয়সহ ১০ দফতরে অভিযোগের অনুলিপি দাখিল করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে নাসির গ্রুপের মোট ১২টি কোম্পানি রয়েছে। ওই কোম্পানিগুলোর ইউনিট স্থাপনের জন্য জমিতে মাটি ভরাট এবং অবকাঠামো নির্মাণে সরবরাহকারী ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী, কাজ শেষে ঠিকাদারদের বিল দেওয়ার সময় অগ্রিম আয়কর ও মূসক কর্তন করার কথা। কিন্তু অগ্রিম আয়কর ও মূসক কর্তন না করেই সরবরাহকারী এবং ঠিকাদারদের বিল দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের কয়েকশ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। কোম্পানির ব্যালেন্স শিটে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। তবে লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত কম্পিউটার সফটওয়্যার, লেজার ও ভাউচারে আয়কর ও মূসক ছাড়াই বিল প্রদানের তথ্য রয়েছে।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, নাসির গ্রুপের টাঙ্গাইল প্রকল্পের বিল প্রদানেও একইভাবে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ‘কর অঞ্চল-১০-এর কর সার্কেল-২০০-এ থাকা নাসির গ্রুপের ২০১০-১১ থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হলে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকার বিলের বিপরীতে অগ্রিম আয়কর ও মূসক আদায় না করার প্রমাণ পাওয়া যাবে বলেও এতে বলা হয়। আর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গ্রুপটির প্রকৃত ব্যাংক বিবরণী এনবিআরে দেওয়া হয় না, নতুন কাগজপত্র ও ব্যাংক বিবরণী তৈরি করে আয়কর অফিসে জমা দেওয়া হয়’ বলেও দাবি করা হয়েছে।

সে সঙ্গে বিল প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর কর্তন করা হয় কি না তা জানতে এর আগে নাসির গ্রুপের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছে আয়কর বিভাগের একটি দল। ‘পরিদর্শনকালে কোম্পানির কর্মকর্তারা ট্যাক্সেস বারের একজন প্রভাবশালী আইনজীবীর মাধ্যমে সবকিছু গোপন করে ওই পরিদর্শক দলকে কৌশলে সন্তুষ্ট করেছে। ওই আইনজীবীর সহায়তায় অনিয়মের মাধ্যমে আয়কর সম্পর্কিত আয়কর মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে’ বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

রাজস্ব ক্ষতির অভিযোগ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে নাসির গ্রুপের আমদানি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আলফাজ উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘কে, কোথায় কী অভিযোগ করেছেÑসে বিষয়ে আমরা এখনও কিছু জানি না। তাই না জেনে কিছু বলা যাচ্ছে না। অভিযোগের কপি থাকলে পাঠান, দেখি কিছু জানাতে পারি কি-না।’ সে অনুযায়ী ওই কর্মকর্তার ই-মেইলে অভিযোগের একটি কপি পাঠানো হয়। এরপর জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রুপের কেউ ওই অভিযোগ করেননি।

চাকরি করা অবস্থায় কেউই কোম্পানির বিরুদ্ধে এভাবে অভিযোগ করবেন না। এটা কোম্পানির নিয়ম-শৃঙ্খলা পরিপন্থী।’

তিনি বলেন, গ্রুপের সুনাম ক্ষুন্ন করতে বাইরের কেউ কোম্পানির কর্মকর্তা পরিচয়ে এটি করে থাকতে পারেন। আর যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, সেগুলো ভিত্তিহীন। অফিসিয়ালি এনবিআর বা অন্য কেউই আমাদের কিছু জানায়নি। তাই এ বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর কোনো পদক্ষেপ নিলে আমরা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব। তারা কিছু জানতে চাইলে নিয়ম-কানুনের মধ্যে থেকেই জবাব দেব।’

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০