Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:45 pm

নাসুম ম্যাজিকে অজিদের প্রথম হারল বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: মিরপুরের স্লো উইকেটে স্পিনাররা সুবিধা পাবে বোঝা গিয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখে। ঠিক সেটাই হল পরের ইনিংসে। শুরু থেকেই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলেন টাইগার স্পিনাররা। বিশেষ করে নাসুম আহমেদের স্পিনেই ভুগেছেন সফরকারীরা। শেষ পর্যন্ত তার ম্যাজিকের কাছেই টি-টোয়েন্টিতে প্রথম হার মানতে বাধ্য হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। মঙ্গলবার ঘরের মাঠে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি বাংলাদেশ জিতেছে ২৩ রানে। এরফলে ৫ ম্যাচ সিরিজে স্বাগতিকরা এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।

সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের ঠিক মেলে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। তাই নির্ধারিত ওভার শেষে স্বাগতিকরা করে ৭ উইকেটে ১৩১ রান। পরে বল হাতে শুরু থেকে দারুণ করে টাইগাররা। বিশেষ করে নাসুম আহমেদ চেপে ধরে অজিদের। শেষ পর্যন্ত তার ম্যাজিকের কাছে দলটি গুটিয়ে যায় ১০৮ রানে। নাসুম নেন ১৯ রানে ৪ উইকেট।

মাঝারি পুঁজি নিয়েও বল হাতে স্বপ্নের শুরু পায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই আলেক্স ক্যারিকে বোল্ড করেন মেহেদি হাসান। টার্ন করবে ভেবে খেলেছিলেন অ্যালেক্স ক্যারি, তবে রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলের লাইন মিস করে তিনি হন বোল্ড। কিছুক্ষণ পরেই নাসুম আহমেদের বলে জশ ফিলিপে স্টাম্পড হন। এরপর ময়জেস হেনরিকেস হন সাকিবের বলে বোল্ড। সাকিবের ধীরগতির ফুললেংথের বলটা সুইপের চেষ্টা করেছিলেন হেনরিকস, ডানদিকে সরে গিয়ে। সফল হননি, হন বোল্ড। সে সময় অজিদের সংগ্রহ ২.১ওভারে ৩ উইকেটে ১১ রান।

শুরুতে দারুণ সফল হলেও অজিদের চতুর্থ উইকেট জুটি মিশেল মার্শ ও ম্যাথু ওয়েড চিন্তায় ফেলে টাইগারদের। সফরকারী দলের এ দুই ব্যাটসম্যান বেশ দেখে শুনে খেলেন। শেষ পর্যন্ত বিপজ্জনক এ জুটি দশম ওভারে ভাঙেন নাসিম। তার করা লেগস্টাম্পের বেশ বাইরে নিরীহ বল ম্যাথু ওয়েড খেলেন শট। কিন্তু ঠিকমত টাইমিং হয়নি। এ সুযোগে ফাইন লেগে ভালো ক্যাচ নেন মোস্তাফিজুর রহমান। ১০ম ওভারে চতুর্থ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরফলে ভাঙে মার্শের সঙ্গে ওয়েডের ৪৫ বলে ৩৮ রানের জুটি।

ওয়েড ফিরলেও বাংলাদেশের মাথা ব্যথ্যার কারণ হয়ে দাঁড়ান মার্শ। পঞ্চম উইকেটে অ্যাস্টন আগারকে নিয়ে এগোতে থাকেন। তবে তাদের জুটি ভাঙে অ্যাগারের ভুলে। নাসুমের নীচু হওয়া বলটা ঘুরিয়েছিলেন অ্যাগার, তবে ভার সামলাতে গিয়ে পেছনে গিয়েছিলেন একটু। তার পা এলোমেলো করে দেয় স্টাম্প। সঙ্গে সঙ্গে নাসুম পেয়ে যান ইনিংসে নিজের তৃতীয় উইকেট। এর কিছুক্ষণ পরেই এ স্পিনার তুলে নেন বিপজ্জনক মার্শকে। নাসুমের
ঝুলিয়ে দেওয়া বলটায় স্লগ সুইপ করতে গিয়েছিলেন মার্শ, তবে হন টপ-এজড। স্কয়ার লেগ থেকে বেশ খানিকটা ছুটে এসে দারুণ ক্যাচ নেন শরীফুল। ফেরার আগে মার্শ করেন ৪৫ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ে ৪৫ রান।

মার্শকে ফেরানোর পর থেকেই জয়ের গন্ধ পেতে থাকে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে ইনিংসের শেষ বলের মধ্যে দিয়ে।

টাইগারদের মোস্তাফিজ ১৬ রানে নেন ২ উইকেট। এদিকে শরীফুল নেন ১৯ রানে ২ উইকেট।

এরআগে মঙ্গলবার ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। যে কারণে বড় শট খেলতে পারছিলো না দলটি। এ অবস্থা থেকে বের হতে সৌম্য সরকার চেষ্টা করেছিলেন তবে আত্মঘাতী হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। জশ হ্যাজলেউডের বলটি বানিয়ে মারতে গিয়েছিলেন, কাট করে সেটি নিজের উইকেটেই টেনে আনেন। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলের ঘটনা। সৌম্য ৯ বলে করেন মাত্র ২ রান।

সৌম্য ফিরলেও নাঈম শেখ বেশ খেলছিলেন। মিচেল স্টার্ককে ফ্লিক করে বড় এক ছক্কাও হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে খেঁই হারিয়ে ফেলেন তিনি। তাই অ্যাডাম জাম্পাকে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে সপ্তম ওভারের শেষ বল বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে এ বাঁহাতি করেন ২৯ বলে ২টি করে চার-ছক্কায় ৩০ রান।

এরপর দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিলে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন কিছুটা। যদিও তেড়েফুরে খেলতে পারেননি তারাও। ৩২ বলের জুটিতে তারা যোগ করেন ৩৬ রান। এরপর ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।

নুরুল হাসান সোহানও উইকেটে টিকতে পারেননি। অ্যান্ড্রু টাইয়ের এক ডেলিভারি অনেকটা সামনে এগিয়ে গিয়ে ওয়াইডের কাছাকাছি জায়গা থেকে তুলে মারেন তিনি, ৪ বলে ৩ রান করে হন মিচেল মার্শের ক্যাচ।

৮৬ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তবে ভরসা হয়ে ছিলেন সাকিব। কিন্তু আর সবার মত তিনিও ঠিক টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে ৩ চারে ৩৬ রান করে হ্যাজেলউডের স্লোয়ারে বোল্ড হন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। শেষ দিকে আফিফ হোসেনের ছোট ঝড়ে (১৭ বলে ২৩) মিরপুরের উইকেটে লড়াইয়ের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রানে ৩টি উইকেট নেন জস হ্যাজেলউড। স্টার্কের শিকার ২টি।

বল হাতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন নাসুম আহমেদ। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বুধবার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া।