শোবিজ ডেস্ক: পাঁচ সপ্তাহের লড়াই শেষে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মারা গেছেন। ৮৬ বছরে শেষ হল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মময় পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর চলে গেলেন বাংলা ছবির প্রবীণ মহাতারকা, অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি-চিত্রকর। আজ রোববার স্থানীয় সময় ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি প্রয়াত হন।
শুক্রবার থেকে সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটতে থাকে। হৃদযন্ত্র আর কিডনির জটিলতা অনেকটা বেড়ে যায়। বেড়ে যায় ‘হার্ট রেট’। বাড়তে থাকে স্নায়বিক সমস্যাও। প্রবলভাবে ওঠানামা করতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। শনিবার বিকেলে চিকিৎসকরা জানান, অলৌকিক কিছু না ঘটলে সৌমিত্রের সুস্থ হয়ে ওঠা অসম্ভব।
ওপার বাংলার সিনেমার বর্ষীয়ান এই অভিনেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর কয়েক দফায় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ও উন্নতির খবর পাওয়া যায়। করোনা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন সৌমিত্র। তবে অন্যান্য জটিল রোগের কাছে পরাস্ত হয়ে আজ পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন এই কিংবদন্তি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় করোনার সঙ্গে একাধিক রোগে ভুগছিলেন। তিনি প্রস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। এটা নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছিল ফুসফুস ও মস্তিষ্কে। মূত্রথলিতেও সংক্রমণ হয়েছিল তার। এতকিছুর সঙ্গে এই বার্ধক্যে তার শরীর লড়াই করে উঠতে পারছিল না।
প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন থাকা খ্যাতিমান এই অভিনেতার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলা চলচ্চিত্রাঙ্গানে।
স্বয়ং সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, তাঁর জীবনের সেরা অবিষ্কার সৌমিত্র। তাঁকে ছাড়া কে-ই বা পথ আটকে গেয়ে উঠবে ‘কে তুমি নন্দিনী’, কে আর অপু হবে.. কে-ই বা প্রখর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে রহস্যের জট খুলবেন ফেলুদা হয়ে?
সাবলীল আর স্বকীয় ভঙ্গিমায় অভিনয় দিয়ে শুধু নিজেকে নয়, ভারতীয় বাংলা চলচ্চিত্রকেই অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ৮৫ বছরের জীবনের প্রায় ৬০ বছরই চলচ্চিত্রকে দিয়েছেন। এমনকি শেষ সময়েও দুর্দান্ত প্রাণশক্তি নিয়ে কাজ করেছেন।
ছয় দশক ধরে দাপটের সঙ্গে ভারতের চলচ্চিত্র ও মঞ্চে অভিনয় করেছেন কিংবদন্তী এই অভিনেতা। কর্মজীবনের শুরুটা হয়েছিল রেডিও’র ঘোষক হিসেবে। এরপর রূপালি পর্দায় পথচলা শুরু ১৯৫৯ সালে খ্যাতিমান নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ দিয়ে। তাঁর অভিনীত চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পায় সত্যজিৎ রায়েরই সৃষ্ট ‘ফেলুদা’।