ক্রীড়া ডেস্ক: টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে কখনো জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সিলেটে সেই আক্ষেপও শেষ হলো টাইগারদের। তাইজুল ইসলামের স্পিন বিষে নীল হয়ে মাত্র ১৮১ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। কিউইদের বিপক্ষে ১৫০ রানের জয় তুলে নেয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ফলে দুর্দান্ত এক জয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরু করলো বাংলাদেশ।
টেস্টের শক্তিমত্তা ও অভিজ্ঞতার বিচারে বাংলাদেশের থেকে ঢের এগিয়ে নিউজিল্যান্ড। তবুও স্বাগতিকদের কাছে পাত্তা পেল না টিম সাউদির শক্তিশালী দল। সাকিব আল হাসান নেই, নেই তামিম ইকবালও। এ দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ছাড়াই বাংলাদেশ দল সিলেটে নিশ্চিত করল বড় জয়। ততক্ষনে অল্প সংখ্যক দর্শকের আনন্দ উল্লাস স্টেডিয়ামের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকাসহ সারাদেশ।
জয়ের অপেক্ষায় থেকে টেস্টের চতুর্থ দিন শেষ করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ৭ উইকেটে হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ১১৩। ২১৯ রানে পিছিয়ে, হাতে বাকি কেবল ৩ উইকেট। আজ সকালের প্রথম প্রথম ৩০ মিনিট অবশ্য দারুণভাবে কাটিয়ে দেন ড্যারিল মিচেল, ইশ সোধি জুটি। পঞ্চাশ হাঁকিয়ে ছুটে চলা ড্যারিল মিচেল অবশ্য থামেন ব্যক্তিগত ৫৮ রানে। নাইম হাসানের বলে তাইজুল ইসলাম দৌড়ে এসে লুফে নেন দারুণ এক ক্যাচ। আর তাতেই ভাঙে মিচেলের প্রতিরোধ।
২৪ বলে ৩৪ করে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো কিউই অধিনায়ক টিম সাউদিকে ইনিংস লম্বা করতে দেননি তাইজুল ইসলাম। তাকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করলেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১২ তম ফাইফার। সাদা পোশাকে তাইজুল ইসলাম ‘দুঃসময়ের কাণ্ডারি’। সাকিব আল হাসান নেই, তাই স্পিনে নেতৃত্ব দিতে হচ্ছে তাইজুলকেই। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর খাদের কিনারায় থাকা দলকে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন তাইজুল। শেষ ব্যাটার ইশ সোধিকে ফিরিয়ে তাইজুল দখলে নেন নিজের ১০ উইকেট। আর তাতেই বাংলাদেশের ১৫০ রানের বড় জয়।
এর আগে ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভীষণ চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাফল্য আসে বাংলাদেশের। শরিফুল ইসলামের পেস তান্ডবে নাজেহাল হয়ে টম লাথাম ক্যাচ তুলেন উইকেটকিপারের গ্লাভসে। ডাক হয়ে ফিরে যাওয়া লাথাম আগের ইনিংসে অবশ্য করেন ২১ রান। উড়তে থাকা বাংলাদেশ দ্রুতই ফিরিয়ে দেয় কেন উইলিয়ামসনকে। আগের ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানানো কেন এই ইনিংসে জ্বলে উঠার সুযোগই পাননি।
১১ রানে থাকা কেন উইলিয়ামসনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল ইসলাম। জোরাল আবেদনে আম্পায়ার আঙুল উঁচিয়ে আউট দেন, উইলিয়ামসন অবশ্য রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। এরপর হেনরি নিকোলসের উইকেট তুলে নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শর্ট ফাইন লেগে দাঁড়িয়ে দারুণভাবে ক্যাচ লুফে নেন নাইম হাসান। ব্যক্তিগত ২ রানে নিকোলস বিদায় নিলে ৩০ রানে ৩ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।
এরপর ৬০ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়েছে কিউইরা। বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে তারা যেন দিশেহারা। ধুঁকতে থাকা ডেভন কনওয়েকে ইনিংস বড় করতে দেননি তাইজুল ইসলাম। ভাঙলেন তার প্রতিরোধ, ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে বল চলে যায় শাহাদাত হোসেন দিপুর হাতে। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ৭৬ বলে তিন চারে কনওয়ে করেন ২২ রান। এরপর টম ব্লান্ডেলকেও সাজঘরের পথ দেখান তাইজুল, উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে কেবল ৬ রান।
প্রথম ইনিংসের ‘অভাগা’ নাইম হাসান আজও বল হাতে দুর্দান্ত। কিন্তু কিছুতেই মিলছিল না তার উইকেটের দেখা। অবশেষে গ্লেন ফিলিপসকে এলবিডব্লিউ করে জোরাল আবেদন। আম্পায়ার সাড়া দেননি, অধিনায়কও শেষ সময়ে গিয়ে নেন রিভিউ। সাফল্য আসে নাইমের পক্ষে, ১২ রানে থাকা ফিলিপস হাটা ধরেন ড্রেসিংরুমে। দলীয় ৮২ রানে ৬ষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথে এগিয়ে চলে কিউইরা।
এরপর কাইল জেমিসনকেও ফিরিয়ে দিলেন তাইজুল। এই উইকেট নিয়েই তাইজুল পৌঁছান আরেক কীর্তিতে। এক টেস্টের দুই ইনিংসেই ফোর-ফার শিকারের মাইলফলক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ৩১০/১০ (৮৫.১ ওভার) (জয় ৮৬, জাকির ১২, মোমিনুল ৩৭, মুশফিক ১২, মিরাজ ২০, দিপু ২৪, সোহান ২৯; ফিলিপস ৪/৫৩)
নিউজিল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)- ৩১৭/১০ (১০১.৫ ওভার) (লাথাম ২১, কনওয়ে ১২, উইলিয়ামসন ১০৪, নিকোলস ১৯, মিচেল ৪১, ফিলিপস ৪২, সাউদি ৩৫, জেমিসন ২৩; তাইজুল ৪/১০৯, মোমিনুল ৩/৪)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ৩৩৮/১০ (১০০.৪ ওভার) (জাকির ১৭, জয় ৮, শান্ত ১০৫, মোমিনুল ৪০, মুশফিক ৬৭, দিপু ১৮, মিরাজ ৫০*, সোহান ১০; এজাজ ১৪৮/৪)
নিউজিল্যান্ড (দ্বিতীয় ইনিংস, লক্ষ্য- ৩৩২ রান)- ১৮১/১০ (৭১.১ ওভার) (কনওয়ে ২২, উইলিয়ামসন ১১, মিচেল ৫৮; তাইজুল ৬/৭৫)