Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:44 pm

নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যে যুক্তরাজ্য

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ব্রেক্সিট-পরবর্তীকালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট) করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দীর্ঘ প্রায় ১৬ মাস আলোচনার পর চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে একমত হয়েছে দুই দেশ। এর আগে আস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চুক্তির ঘোষণা দিয়েছিল যুক্তরাজ্য। এর ফলে উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা উপকৃত হবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। খবর: বিবিসি।

স্থানীয় সময় বুধবার ভার্চুয়ালি বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন। চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এ চুক্তির ফলে ব্রিটেনের রপ্তানিকারকদের খরচ কমবে এবং এর মধ্য দিয়ে নিউজিল্যান্ডের চাকরির বাজারে ব্রিটিশ চাকরি প্রার্থীদের কাজের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে।

একইসঙ্গে কানাডা ও জাপানের মতো দেশের সঙ্গে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সিপিটিপিপি) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে অংশ নেয়ার পথে এ চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অপরদিকে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডকে মহান বন্ধু এবং বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের বেঁধে রাখা ঐতিহাসিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের অর্থনীতি, ব্যবসা ও জনগণের জন্য এ চুক্তিকে উপকারী বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এ চুক্তির ফলে ব্রিটেনে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য, যেমন তৈরি পোশাক, জাহাজ ও বুলডোজারের ওপর নিউজিল্যান্ডের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের সুবিধা মিলবে। অপরদিকে ব্রিটিশ বাজারে করছাড়ের সুবিধা পাবে ভেড়ার মাংস, মদ, মধু ও কিউয়ি ফলসহ নিউজিল্যান্ডে উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য। পাশাপাশি ব্রিটেনের উকিল ও প্রকৌশলীদের মতো বিভিন্ন পেশার লোকদের জন্য নিউজিল্যান্ডের চাকরির বাজারে আরও বেশি করে সুযোগ তৈরি হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।

অবশ্য চুক্তিকে ঘিরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বাস থাকা সত্ত্বেও এ চুক্তি যুক্তরাজ্যের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্যের পরিমাণ খুবই কম। যুক্তরাজ্যের মোট বাণিজ্যের মাত্র শূন্য দশমিক দুই শতাংশ সম্পন্ন হয় নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যার পরিমাণ বছরে মাত্র তিন দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার।

ব্রেক্সিটের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এ চুক্তি করল যুক্তরাজ্য। ব্রিটেনের মোট রপ্তানির ৪২ শতাংশ ও মোট আমদানির ৫০ শতাংশ সংঘটিত হয় ইইউ-ভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে। কিন্তু ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো। মূলত সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করার ব্যাপারে ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাজ্য।

এদিকে এ চুক্তির ব্যাপারে সতর্কভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের কৃষক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলো। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফারমারস ইউনিয়ন (এনএফইউ) জানিয়েছে, এ চুক্তির ফলে যুক্তরাজ্যের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের খাদ্যপণ্যের গুণগত মানেরও অবনতি ঘটাতে পারে।

এনএফইউ বলছে, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এর আগে করা চুক্তির মতো এ চুক্তিও তাদের জন্য বিশাল ক্ষতির কারণ হবে। বিশেষ করে ব্রিটেনের মাংস উৎপাদনকারীদের জন্য এ চুক্তি একটি অশনি সংকেত।

এনএফইউ প্রেসিডেন্ট মিনেত্তে ব্যাটারস বলেন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এ চুক্তির মানে হচ্ছে, আমাদের দেশে তাদের উৎপাদিত অতিরিক্ত পণ্যের আমদানি, যা আমাদের নিজেদের উৎপাদিত মানসম্পন্ন পণ্যের সমকক্ষ নয়। এর ফলে আমাদের কৃষকদের জন্য কিছুই থাকছে না।

এ চুক্তির সমালোচনা করছে ব্রিটেনের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও। ব্রিটেনের ছায়া বাণিজ্যমন্ত্রী এমিলি থরবেরি বলেন, এ চুক্তির ফলে মূলত লাভবান হবে নিউজিল্যান্ডের বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো, যারা মূলত দেশটির মাংস উৎপাদন ও ডেইরি শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করে।

তবে ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী অ্যান মেরি ট্রেভেলিয়ান বলেন, এ চুক্তি উভয় পক্ষের জন্যই নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে। তিনি ব্রিটেনের কৃষকদের এ ব্যাপারে অহেতুক উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য পরামর্শ দেন।