Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:06 pm

নিউমোনিয়ায় শিশু মৃত্যুহার কমাতে প্রয়োজন বহুপদ্ধতির সমন্বয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিউমোনিয়া কেবল একটি অসুখ নয়, নানামুখী শারীরিক জটিলতা থেকে এই রোগ হয়। আর তাই রোগের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, পুষ্টিহীনতা হ্রাস এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুহার হ্রাস করা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ-আইসিডিডিআর,বি বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুরোধে করণীয় বিষয়ক একটি আলোচনায় এই তথ্য ওঠে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএইডের সহায়তায় এই মতবিনিময় সভাটি আয়োজন করে আইসিডিডিআর,বি’র রিসার্চ ফর ডিসিশন মেকার্স (আরডিএম) প্রকল্প এবং ডাটা ফর ইম্প্যাক্ট (ডিফরআই)। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ রাব্বিসহ ১৪ জন সাংবাদিক এই সভায় অংশগ্রহণ করেন।

শিশু বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. মো. রুহুল আমিন; চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ড. সমীর কুমার সাহা; আইসিডিডিআর,বি’র নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেসের সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী এবং আরডিএম অ্যাক্টিভিটির চিফ অব পার্টি ও আইসিডিডিআর,বি’র মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য ডিভিশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. শামস এল আরেফিন সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুরোধ বিষয়ে মতামত বিনিময় করেন।

আইসিডিডিআরবি,র সায়েন্টিস্ট ড. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশের মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিউমোনিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সক্ষমতা আছে। ওই সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে  অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর নেই। এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেনের অন্যান্য সোর্সও অনুপস্থিত। মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জেলা হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার আছে। অভিভাবকদের মধ্যেও সন্তানকে চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনার প্রবণতা দুর্বল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।

অধ্যাপক ড. মো. রুহুল আমিন বলেন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহারের ১৮ শতাংশ নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যু। এই মৃত্যুহার হ্রাসে তিনি শিশুকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া, ৬ মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা এবং শ্বাসকষ্ট হলে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ওপর প্রচারণা চালাতে অনুরোধ করেন। 

ড. সমীর কুমার সাহা বলেন, শুধু মৃত্যুহার নয়, কত সংখ্যক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে সেই সংখ্যা জানা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫০% রোগীর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার কারণ জানা যায় না। এই তথ্য ছাড়া ভবিষ্যতে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা প্রদান কঠিন হয়ে যাবে। শিশু নিউমোনিয়া হ্রাসে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য সবার সম্মিলিত প্রয়াসের ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার, স্বল্পমূল্যের দেশীয়  অক্সিজেন স্বল্পতা দূর করার  বিষয়ে আলোচনা করেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্লাস্টিক বোতল দিয়ে তৈরি বাবল সিপ্যাপ নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম। তিনি আরও বলেন, অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুহার প্রবণতা ১৫ গুণ বেশি বলে গবেষণায় দেখা যায়।