নিউমোনিয়া এখনও বিশ্বব্যাপী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় ২৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ায়। এটি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ২৪ শতাংশ। বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআরবি) আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
‘শিশুদের নিউমোনিয়া: আমরা কি যথেষ্ট করছি’ শিরোনামে এই আলোচনা অনুষ্ঠানে
আইসিডিডিআর,বি’র জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানীরা জানান, ২০১৯ এবং ২০২১ সালে আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী, গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের বিষয়টি উঠে আসে। গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া শৈশবকালীন নিউমোনিয়ার নতুন কারণ। ঘরের মধ্যে বাতাস দূষিত হলে নিউমোনিয়ার মৃত্যুঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে পারলে সংক্রমণ ২১ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। এমনকি গর্ভবতী নারীদের ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা দিলে নবজাতকদের গুরুতর নিউমোনিয়া এবং হাইপোক্সেমিয়া (রক্তে অক্সিজেনের স্বল্পতা) প্রতিরোধ করা সম্ভব।
কয়েক যুগ আগেও দেশে শিশুমৃত্যুর বড় কারণ ছিল নিউমোনিয়া। সময়ের পরিক্রমায় দেশ শিশুমৃত্যু কমিয়ে আনতে পারলেও নিউমোনিয়ার প্রকোপ রয়েই গেছে। অথচ পরিবারের বিশেষ করে মায়ের সচেতনতায় এ রোগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। যেমন, শিশুর জšে§র প্রথম ছয় মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা ১৫ শতাংশ কমে। আইসিডিডিআর,বি’র গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ অভিভাবক সন্তানদের নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসা গ্রহণ করেন না।
নিউমোনিয়া একটি জটিল রোগ। এই রোগের জীবাণু মানুষের ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রকে আক্রমণ করে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের সংক্রমণের মাধ্যমে নিউমোনিয়া ছড়ায়। শীতকালে সাধারণত শিশুরা এই রোগের শিকার হয় বেশি। এ রোগের লক্ষণগুলো হলো জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাঁপুনি, বুকে ব্যথা প্রভৃতি। শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের জ্বর ছাড়াই নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঘাম ও বুকে ব্যথা দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে নিউমোনিয়া এড়ানো সম্ভব।
প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসায় নিউমোনিয়া নিরাময়যোগ্য। কিন্তু কিছু অভ্যাস নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। এগুলো পারিবারিক গণ্ডিতেই মেনে চলা সহজ। চিকিৎসকারা বলেন, নিউমোনিয়ার প্রধান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। বাসস্থান পরিষ্কার রাখতে হবে। ঘনঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করা; হাঁচি দেয়ার সময় নাক ঢেকে রাখতে হবে। দরজার হাতল, মোবাইল ফোন, রিমোট প্রভৃতি ধরার পর হাত জীবাণুমুক্ত করতে হবে। জীবাণুমুক্ত না করে চোখ-নাক-মুখ স্পর্শ করার অভ্যাস ছাড়তে হবে। সবাইকে বসে খাবার গ্রহণের অভ্যাস করতে হবে, শুয়ে বা চিত হয়ে খাওয়া যাবে না। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিজে নিজে চিকিৎসা করা বা অপচিকিৎসা বা ফার্মেসিতে গিয়ে নিজের মতো করে ওষুধ কিনে না খাওয়া। নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিৎসকের পরামর্শসহ ওষুধ সেবনই হতে পারে সুস্থতার নিয়ামক।
বাংলাদেশের শিশুদের নিউমোনিয়ার কারণ বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে ভিন্নতর। নিউমোনিয়া প্রতিরোধে যেহেতু সচেতনতাই মুখ্য। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে জীবনযাপন এবং ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে রাষ্ট্র, সরকারি-বেসরকারি সংগঠনও নিউমোনিয়া প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসবে বলেই প্রত্যাশা।