Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 7:23 pm

নিটল ইন্স্যুরেন্সের সাত কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি

মাসুম বিল্লাহ পলাশ শরীফ: সাধারণ বিমা কোম্পানি নিটল ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। পুনঃবিমা কমিশন ও অন্যান্য আয়ের ওপর বকেয়া প্রায় সাত কোটি টাকা মূসক আদায়ের জন্য এরই মধ্যে দাবিনামা পাঠানো হয়েছে। তারপরও বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ না করায় কোম্পানিটিকে প্রাথমিক দাবিনামাসহ কারণ দর্শানোর জন্য নোটিস দিয়েছে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট।

জানা যায়, নিটল ইন্স্যুরেন্স ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিহার করা রাজস্বের পরিমাণ ছয় কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এর আগে দাবিনামা জারি করা হলেও তারা তা পরিশোধ করেনি। ফলে সময়মতো পরিশোধ না করায় প্রদেয় রাজস্বের ওপর জরিমানা হয়েছে আর পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটির কাছে রাজস্ব পাওনা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

কাস্টমস, এক্সাইজ অ্যান্ড ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা উত্তরের কমিশনার মাসুদ সাদিক স্বাক্ষরিত ওই কারণ দর্শানোর নোটিসে নিটল ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে উদ্দেশ করে বলা হয়, সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আপনার প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিহারকৃত মূসক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকার প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এরূপ কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সরকারি রাজস্ব সংরক্ষণের পরিপন্থী। এ অবস্থায় নিটল ইন্স্যুরেন্সের ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরীক্ষায় উত্থাপিত আপত্তি অনুযায়ী সর্বমোট ছয় কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার টাকা আদায়যোগ্য। এ অর্থ পরিশোধের লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর আইন ১৯৯১ এর ৫৫ ধারার ১ উপধারার বিধান মোতাবেক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আমি নি¤œ স্বাক্ষরকারী উল্লিখিত দাবিকৃত টাকাসহ আনার দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করলাম।

জানা যায়, নিটল ইন্স্যুরেন্সের রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটনে সিএ ফার্মের অডিট রিপোর্টের আয়ের হিসাব পর্যালোচনা করা হয়। এতে রি-ইন্স্যুরেন্সের কমিশনের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ না করার বিষয়টি উদ্ঘাটন হয়। মূসক নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর পর্যালোচনা করে এ রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন করে তা সংশ্লিষ্ট কমিশনারেটকে জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কমিশনারেট এ দাবিনামা ও কারণ দর্শানোর নোটিস দিল।

গত ১ জানুয়ারি জারি করা দাবিনামা ও কারণ দর্শানোর চিঠিতে উত্থাপিত দাবি বিষয়ে লিখিতভাবে বক্তব্য জানাতে নিটল ইন্স্যুরেন্সকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপত্তি বা বক্তব্য জানালে এ বিষয়ে কোম্পানিটিকে শুনানিতে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। অন্যথায় মূসক দাবি বিষয়ে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

মূসক দাবি বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিটল ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুল করিমের সঙ্গে সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। আর কোম্পানিটির চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম দেশের বাইরে আছেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবসা শুরু করে নিটল ইন্স্যুরেন্স। এরপর ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বেসরকারি খাতের সাধারণ বিমা কোম্পানিটি সর্বশেষ সমাপ্ত (২০১৫-১৬) আর্থিক বছরে ছয় কোটি ৬০ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ১৩ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। ‘এ’ ক্যাটেগরির কোম্পানিটির মোট প্রায় তিন কোটি ৫২ লাখ শেয়ারের ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। এর আগে ডিএসইতে সর্বশেষ লেনদেন শেষে প্রায় ৩৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের নিটল ইন্স্যুরেন্সের বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ১১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ওইদিন কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার ৩৩ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।