নিজস্ব প্রতিবেদক: নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার জন্য সদস্যদের নির্দেশনা দিয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে গত সপ্তাহে নিজেদের সদস্য কারখানাকে নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলে দিয়েছিল তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বিকেএমইএ তাদের সদস্যদের জন্যও একই নির্দেশনা দিয়েছে।
সদস্যদের দেয়া বিকেএমইএর নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। তাই জরুরি প্রয়োজন না হলে কারখানায় শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখুন। কারখানার গেটে ‘নিয়োগ বন্ধ’ নোটিশ দৃশ্যমান স্থানে লাগাতে ব্যবস্থা নিন। যদি নতুন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য যাচাই করে নিয়োগ দিন। প্রয়োজনে শ্রমিকের তথ্যভাণ্ডারসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হোন।”
বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান স্বাক্ষরিত এক নোটিশে গত সোমবার এই নির্দেশনা দেয় সংগঠনটি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেএমইএ গণমাধ্যমকে বিষয়টি অবহিত করে।
বিকেএমইএর নোটিশে বলা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের ডামাডোলে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট হচ্ছে। এতে রপ্তানিমুখী নিট পোশাক খাতে ঋণাত্মক প্রবাহ লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মধ্যে ন্যূনতম মজুরিকাঠামো ঘোষিত (প্রকৃতপক্ষে ন্যূনতম মজুরির খসড়া চূড়ান্ত করেছে নিম্নতম মজুরি বোর্ড) হয়েছে। কষ্ট হলেও নতুন মজুরি বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বা মহল এই সুযোগে শিল্পটিকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রের ছক আঁকছে।’
নোটিশে বলা হয়, ‘মনে রাখতে হবে, দেশ ও দেশের অর্থনীতি এবং শ্রমিকদের স্বার্থে এই শিল্পকে আমাদের টিকিয়ে রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও কৌশলমাফিক নীতি প্রণয়ন।’
মালিকদের উদ্দেশে বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, ‘শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করেই এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে হবে। আপনার কারখানায় কোনো অবস্থাতেই যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখুন। বিকেএমইএর অনুমোদন ব্যতীত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কারখানার তথ্য-উপাত্ত দেয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনার দেয়া তথ্য কে কীভাবে ব্যবহার করবে, তার নিশ্চয়তা না পেলে তা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াবে।’
বিকেএমইএ কারখানার কর্মকর্তাদেরও এ বিষয়ে অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়া কোনো শ্রমিক কারখানায় প্রবেশের পর কাজ না করলে কিংবা বেরিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট কারখানার কর্তৃপক্ষ শ্রম আইনের ১৩(১) ধারার (কাজ নেই, মজুরি নেই) ভিত্তিতে বন্ধ রাখতে পারবেও জানিয়েছে বিকেএমইএ। সংগঠনটি নিজেদের সদস্য কারখানা মালিকদের উদ্দেশে বলেছে, নিয়মিতভাবে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনাসহ তাদের সুবিধা-অসুবিধা শোনার পাশাপাশি লিপিবদ্ধ করুন। কোনো সমস্য চিহ্নিত হলে দ্রুত সমাধান করার ব্যবস্থা নিন।
কারখানার সব ধরনের নিরাপত্তার স্বার্থে তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বিকেএমইএ। সংগঠনটি বলেছে, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখুন, যাতে কোনো ধরনের আশঙ্কার আভাস পেলেই ব্যবস্থা নেয়া যায়। তাই সিসিটিভির ফুটেজ নিরাপদে সংরক্ষণ রাখুন।’
পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের জন্য গত এপ্রিলে নিম্নতম মজুর বোর্ড গঠন করে সরকার। গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের সভায় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। আর মালিকপক্ষ প্রায় অর্ধেক বা ১০ হাজার ৪০০ টাকা মজুরির প্রস্তাব দেয়। মালিকপক্ষের এই মজুরি প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকরা পরেরদিন আন্দোলনে নামেন। প্রথমে গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা আশুলিয়া ও মিরপুরে ছড়ায়। এই আন্দোলনে গাজীপুরের চারজন পোশাকশ্রমিক নিহত হয়েছেন।
গত ৭ নভেম্বর পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত হয়। তারপরও আন্দোলন চলতে থাকায় ৮ নভেম্বর থেকে শ্রম আইনে ১৩(১) ধারায় কারখানা বন্ধ করা শুরু করেন মালিকরা। সোমবার থেকে বন্ধ কারখানা খুলতে শুরু করেছে।