Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 4:48 am

নিট রিজার্ভ শুধু আইএমএফকে জানাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক:দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটিতে ঋণ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল ব্যালান্স অব পেমেন্ট ৬ বা বিপিএম৬-এর ফর্মুলা মানা। অবশেষে মুদ্রানীতিতে সেই শর্ত মানার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গতকাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে নিট রিজার্ভ রয়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

গভর্নর বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের হিসাব ‘দুই পদ্ধতিতেই’ করবে। অর্থাৎ আগে যে পদ্ধতিতে করা হতো, সেভাবেও করা হবে, আবার বিপিএম৬ পদ্ধতিতেও করা হবে। তবে আমরা বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুযায়ী, প্রকৃত রিজার্ভের তথ্য হিসাব করলেও তা প্রকাশ করব না। পৃথিবীর কোনো দেশ তা প্রকাশ করে না। আইএমএফের এ বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই প্রকাশে।’

এতদিন কেন প্রকাশ করা হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগে কেন করা হয়নি, তা আগে যারা ছিল; তারা বলতে পারবে। বিপিএম৬ সব দেশ অনুসরণ করছে। তাই আমরা করছি। এছাড়া আইএমএফ থেকে সস্তায় ঋণ পেতে হলে কিছু শর্ত মানতেই হবে।

জানা যায়, রিজার্ভের অর্থে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ও লং টার্ম ফাইন্যান্সি ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ) শীর্ষক তহবিল গঠন করা হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনে (আইটিএফসি) আমানত হিসেবেও রাখা হয়েছে রিজার্ভের অর্থ। এছাড়া রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে (এসবিএফএফ) পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ বিমানকে অর্থায়ন করা হয়েছে। এর বাইরে কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলংকাকে দেয়া হয়েছে ঋণ।

গত ১১ মে পর্যন্ত হিসাবে এসব জায়গায় রিজার্ভ থেকে খাটানো অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ইডিএফে ৪৭৮ কোটি ৭৬ লাখ, জিটিএফে ১৭ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, এলটিএফএফে ২৭ কোটি ৩৭ লাখ, আইটিএফসিতে আমানত ২৪ কোটি ৭৪ লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পায়রাবন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ বিমানকে ৭৭ কোটি ৫৭ লাখ এবং শ্রীলংকাকে দেয়া ঋণ ২০ কোটি ডলার।

আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, এসব দায় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচিত হবে না। সংস্থাটির ভাষায় এগুলো নন-লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ। তাই রিজার্ভ থেকে এসব অর্থ বাদ দিয়ে প্রকৃত রিজার্ভ দেখানোর পরামর্শ দিয়ে আসছে আইএমএফ। বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ সহায়তার অন্যতম শর্তই রয়েছে বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভের হিসাবায়ন।

সূত্রগুলো বলছে, ২০২১ সালের ৩-১৪ অক্টোবর বাংলাদেশ পরিদর্শনের ভিত্তিতে আইএমএফের পাঠানো সেফগার্ড অ্যাসেসম্যান্ট রিপোর্টে রিজার্ভের অর্থে গঠিত তহবিল ও ঋণের দায় বাদ দেয়ার সুপারিশ করা হয়। সে সময় এসব দায়ের পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ৭১৬ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। তবে নিট রিজার্ভ বাড়ানোর অংশ হিসেবে জিটিএফ থেকে নতুন ঋণ বিতরণ পুরোপুরি বন্ধ ও ইডিএফ তহবিলের আকার ক্রমান্বয়ে ছোট করে আনায় বর্তমানে এই দায়ের পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। অন্যদিকে গত ১৪ জুন শেষে দেশে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে নিট রিজার্ভ রয়েছে ২৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।