নিত্যপণ্যের চাহিদা নিরূপণে সমীক্ষা চালাবে এফবিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক: পেঁয়াজ, চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সঠিক চাহিদা নিরূপণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নতুন সমীক্ষা চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

গতকাল রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

যদিও কেন সম্প্রতি পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেল, এর পেছনে কোনো পক্ষ জড়িত আছে কি না, এই বৈঠক থেকে এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর বের হয়নি।

নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মতিঝিলে এফবিসিসিআই ভবনে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রীসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, মেঘনা গ্রুপসহ অন্যান্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ঢাকার বিভিন্ন আড়তদার সমিতির প্রতিনিধিরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ১টায় শুরু হওয়া এই বৈঠক চলে বেলা ৩টা পর্যন্ত।

বৈঠক শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি ফাহিম বলেন, ‘সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাংলাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বছরব্যাপী যে চাহিদা আছে, উৎপাদন ও আমদানির সঙ্গে ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং বিপণনÑএই বিষয়গুলো যৌথভাবে পাবলিক প্রাইভেট অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটা হিসাব-নিকাশ তৈরি করা। এর সঠিক মূল্যায়ন করা যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের পণ্যের কখনও অস্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতি না দাঁড়ায়।’

যদিও বৈঠকের মূল সিদ্ধান্ত ‘সরকারি-বেসরকারি পক্ষের অংশগ্রহণে নতুন ইনভেন্টরি’ তৈরির এ সিদ্ধান্তকে ‘গতানুগতিক’ বলে এক সাংবাদিক মন্তব্য করলে এর সঙ্গে দ্বিমত করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত করছি, এগুলো ব্যবসার খুবই প্রাকটিক্যাল মেথডলজি। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এটা চলমান আছে। এর সঙ্গে বেসরকারি অংশীজনদের যুক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।’

বাজারের বর্তমানে পেঁয়াজসহ কোনো পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি নেই বলে বৈঠকে দাবি করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ, ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বেরুনী। বাজারে নিত্যপণ্যের ন্যায্য? মূল্য কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে।

শেখ ফাহিম বলেন, ‘মোটা দাগে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, সেটা হচ্ছে একটা সময় বেঁধে দিয়ে কীভাবে একটা সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা যায়। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কেউ যদি অসাধু ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত হয়, তাহলে এফবিসিসিআই ও বাজার সমিতির মাধ্যমে একটা সঠিক ব্যবস্থা যেন তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়।’

এদিকে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হতে আরও ১০ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে। এ পেঁয়াজ চট্টগ্রাম পর্যন্ত আমদানি খরচ কেজিপ্রতি ৩২ টাকা পড়বে। কিন্তু খুচরা বাজারে এটি সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় বিক্রি হবে। এছাড়া ডিসেম্বরের প্রথমেই বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। সব মিলিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ২৪ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ লাগে। এর মধ্যে সাত থেকে আট লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই আসে ভারত থেকে। কিন্তু ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় আমাদের দেশের বাজারে সমস্যার সৃষ্টি হয়। পেঁয়াজের সংকট মোকাবিলায় বড় বড় ব্যবসায়ীকে পেঁয়াজ আমদানি করতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। তারা আমাদের কথা মতো মিসর-তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজ আসতে এক মাস সময় লাগবে, প্রথম অবস্থায় আমরা তা বুঝতে পারিনি। তাই তাৎক্ষণিক সংকট মেটাতে উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়।’

যদিও বিমানে পেঁয়াজ আমদানির পরও নিয়ন্ত্রণে আসেনি বাজার। গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কমে ২০০ টাকার নিচে আসে। অস্বাভাবিক বাড়ার পর ধারাবাহিকভাবে কমে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ ১৮০ এবং নিম্নমানের ১২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হয়। কিন্তু গত দুদিন অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার ফের আগুন ঝরে পেঁয়াজের বাজারে।

এদিকে কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ট্যাক্স নেই বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘চালে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই আমরা চাল আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছি। প্রয়োজনে এটা কমিয়ে দেওয়া হবে। দেশে লবণ, তেল, চিনি, ডালের মতো জাতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বাড়ানো নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না। এগুলোর দাম আর বাড়বে না।’

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, পেঁয়াজসহ যেসব পণ্য আমদানি হয়েছে, সেগুলোর তথ্য সংগ্রহ চলছে। কোন পণ্য কী পরিমাণ আমদানি করা হয়েছে, সেটি কখন, কীভাবে বিক্রি হয়েছে, সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০