প্রতিবছর রমজান মাসকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রোজার কয়েক মাস আগেই তারা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এভাবেই তারা নিরীহ ভোক্তার পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এবারও সেই চক্র একই কৌশল অনুসরণ করছে। আগামী মার্চে শুরু হচ্ছে রমজান। অথচ ইতোমধ্যে রমজানে বিশেষ চাহিদা রয়েছে এমন সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।
সদ্য শেষ হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হঠাৎ করে চালের দাম বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের পর সরবরাহে সমস্যা, ধানের দাম বৃদ্ধি, খুচরা পর্যায়ে মনিটরিং না করা ও অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে বেড়েছে চালের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্রান্তের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত যৌথসভায় তিনি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে কিছু চক্রান্তকারী মহলকে দায়ী করেছেন।
অনেকের মতে, নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে কঠোর তদারকি থাকায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারেননি। তবে নির্বাচনের পর সুযোগ বুঝে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু সিন্ডিকেট। তাদের কারসাজির কারণে আমনের বাম্পার ফলনের পরও চালের দাম বেড়েছে।
এটা স্পষ্ট যে, পণ্যের জোগান এখানে মূল সমস্যা নয়। কিছুদিন আগেও বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়াই মৌসুমি শাকসবজির বর্ধিত দাম নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছে সংবাদপত্রে। একইভাবে মুরগির মাংস ও ডিমের বাজারও অস্থিতিশীল করে রাখা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য টিকে থাকা আরও কষ্টকর হবে।
দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে বলে যে কথাটি প্রচলিত করার চেষ্টা চলছেÑতা আদতে শুভঙ্করের ফাঁকি। বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের আয় যতটা বেড়েছে, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়েছে তার চেয়েও বেশি। ফলে জীবনযাত্রার মানে আপস করতে হচ্ছে। এমনকি খাবার টেবিল থেকেও দুয়েকটা পদ কমাতে হয়েছে। এতে মৌলিক পুষ্টিতে ঘাটতি পড়ছে এক বিরাট জনগোষ্ঠীর। তাই শুধু ক্রয়ক্ষমতার হিসাব দিয়ে আত্মতৃপ্তিতে ভুগে লাভ নেই।
সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে প্রায় প্রতিবছরই বলা হয়, সব পণ্যেরই পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। ফলে দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। অথচ রমজান শুরুর দুই মাস আগেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী। সিন্ডিকেট বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন কথাও চালু আছে। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই সরকারকে এখানে মূল ভূমিকা নিতে হবে। বাজার তদারকি কর্তৃপক্ষকে মজুতদার ও সিন্ডিকেট চক্রের ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।