Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:33 pm

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে উৎসে কর প্রত্যাহার চায় আইসিএমএবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সব ধরনের কৃষিজাত ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যকে উৎসে কর কর্তনের আওতাবহির্ভূত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি)। পাশাপাশি ফেসবুক, গুগলসহ অন্য জনপ্রিয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আয়কর আদায়ে স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগের বিধান প্রবর্তন ও ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে সাত লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে আইসিএমএবি। একইভাবে সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছেন সিমেন্ট ব্যবসায়ীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পৃথক প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

সভায় ডিজিটাল ইকোনমির আয়ের ওপর কর আরোপ প্রসঙ্গে আইসিএমএবি প্রেসিডেন্ট মো. আবদুর রহমান খান বলেন, আয়কর আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে স্থায়ী অফিস না থাকলে কোনো বিদেশি কোম্পানিকে কর ধার্যের আওতায় আনার বিধান নেই। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে স্থায়ী স্থাপনা না রেখে বিদেশি কোম্পানিগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ভ্যাট আইনের মতো আয়কর আইনে স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগের বিধান করা হলে বিদেশি কোম্পানি স্থানীয় এজেন্ট রাখবে এবং তা তাদের বাংলাদেশের স্থানীয় স্থাপনা বলে বিবেচিত হবে। এতে তারা বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের ওপর কর প্রদানে বাধ্য থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর উৎসে কর প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চাল, ডাল, আটা, ময়দাসহ সব ধরনের কৃষিজাত পণ্যে দুই শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হলে তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। তিনি বলেন, বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। একটি কোম্পানি তার আয় শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন করে থাকে। কোম্পানির সম্প্রসারণের জন্য মূলধনের প্রয়োজন দেখা দিলে নগদ লভ্যাংশের স্থলে স্টক লভ্যাংশ দিয়ে মূলধন বাড়ানো হয়। কিন্তু বিদ্যমান ১০ শতাংশ করের কারণে ব্যবসা সম্প্রসারণে তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়া এই লভ্যাংশ কর-পরবর্তী আয় থেকে দেয়া হয় বলে আবার কর আরোপ অযৌক্তিক। সেজন্য এই করের বিধান বাতিল করার প্রস্তাব করা হয়।

এসময় পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বলেন, অর্থবছর শেষ হওয়ার পর আয়কর আইনের শর্ত শিথিল বা সুবিধা দিলে তা করদাতাদের খুব বেশি কাজে আসে না। এছাড়া বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে কোম্পানির মূলধনের ওপর ঋণ প্রাপ্তির সীমা বেঁধে দেয়ার প্রস্তাব জানানো হয়। রাজস্ব আহরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব আইন আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কথাও বলেন নেতারা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, সিমেন্ট ক্লিংকার আমদানিতে আমদানি শুল্কের পরিমাণ প্রতি টনে ৫০০ টাকা। এটি কমিয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল সিমেন্ট ক্লিংকার, সø্যাগ, লাইমস্টোন, ফ্লাই অ্যাশ ও জিপসাম আমদানিতে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। তা কমিয়ে দশমিক পাঁচ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছ। সিমেন্ট উৎপাদকেরা প্রস্তাব দিয়েছেন, এসব কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম কর দশিমক পাঁচ শতাংশ করা উচিত। এ ছাড়া লাইমস্টোন আমদানির ওপর ৩০ শতাংশ সম্পুরক শুল্ক আরোপ হয়। এই শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়েছে।

বিসিএমএ সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, সিমেন্ট একটি উদীয়মান শিল্প খাত। ২০০০ সালের দিকে এই শিল্পের বিকাশ শুরু হয়। কিন্তু কভিড ও সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক চাপের সময়ে সিমেন্ট খাতের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। অগ্রিম কর হিসেবে অর্থ কেটে রাখা হচ্ছে, সেই পরিমাণ মুনাফা করতে পারি না। ওই অগ্রিম কর চূড়ান্ত দায় হওয়ায় বছর শেষের করের সঙ্গে সমন্বয় করা যায় না। তাই চূড়ান্ত দায় হিসেব অগ্রিম কর কেটে রাখার বিধান বাদ দেওয়া উচিত। অগ্রিম করের পরিমাণও কমানো দরকার। এক অনুষ্ঠানে ইস্পাত ও ইট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারাও শুল্ককর কমানোর দাবি জানান।

স্ক্র্যাপ আমদানিতে আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির মহাসচিব মোহাম্মদ শহীদউল্লাহ বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। সংগঠনটির বাজেট প্রস্তাব অনুযায়ী, বর্তমানে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানিতে প্রতি টনে এক হাজার ৫০০ টাকা আমদানি শুল্ক দিতে হয়। এটি কমিয়ে ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে প্রতি টনে ৫০০ টাকা অগ্রিম কর কেটে রাখা হয়। তা কমিয়ে ১০০ টাকা করার দাবি জানানো হয়েছে।

সংগঠনের সাবেক সভাপতি শেখ মাসাদুল আলম বলেন, স্থানীয় পর্যায় থেকে স্ক্র্যাপ সরবরাহের ওপর ভ্যাট নেই। কিন্তু ভ্যাট কর্মকর্তারা তা মানতে নারাজ। স্থানীয় পর্যায় থেকে স্ক্র্যাপ সরবরাহে ভ্যাট না থাকার অন্যতম কারণ হলো, যাদের কাছ থেকে স্ক্র্যাপ কেনা হবে, সেক্ষেত্রে বেশ অপ্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করা হয়। তাদের কাছ থেকে ভ্যাটের রসিদ আশা করা যৌক্তিক নয়।

এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আমাকে রেভিনিউ কালেক্ট করতে হবে। আমার দেশের ডেভেলপমেন্টের জন্য, আমাদের গ্র্যাজুয়েশনের জন্য আমার টাকা দরকার, ফাইন্যান্স আমাকে সেই রেভিনিউ সংগ্রহ করতে বলেছে। আমার তো দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। নির্মাণসামগ্রীর এই সেক্টরগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে যৌক্তিক সহায়তা দরকার, আমরা বরাবরই তা করে আসছি। সবারই দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। যারা ব্যবসা করছেন তাদের সবারই দেয়ালে পিঠ ঠেকানো, কাস্টমসের জন্য, ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাটের জন্য, আর অন্য কোনো কিছুর জন্য নয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্য, আমাদের ডলার ক্রাইসিস। যখনই সেগুলোকে অ্যাড্রেস করতে পারেন না, মুক্তির যখন আর কোনো পথ নেই, তখনই এই টেবিলে (এনবিআর) চলে আসেন। অন্যগুলো যখন ম্যানেজেবল না, তখন এনবিআর আছে কাছে, এনবিআরের কাছে একটু আসি। আপনাদের ক্রাইসিস আমরা ফিল করি, আপনাদের দেয়ালে পিঠ অবশ্যই ঠেকে গেছে। আমাদের কর্মকর্তাদের বিষয়টি দেখার জন্য বলব।