নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়

নিপাহ ভাইরাস প্যারামিক্সো ভাইরাসগুলোর একটি, যা প্যারামিক্সোভিরিডি গোত্রের মনোনেগাভিরালিস বর্গের অন্তর্গত। এ গোত্রের দুটি সদস্যের নাম হচ্ছে হেনড্রাভাইরাস ও নিপাহ ভাইরাস।

হেনিপাভাইরাসের জিনোম (৩’ থেকে ৫’ মুখী সজ্জা) এবং পি জিনের উৎপাদনগুলোÑ

নিপাহ ভাইরাসগুলো প্লিওমরফিক (বিভিন্ন আকার বিশিষ্ট) এবং ৪০-৬০০ ন্যানোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হয়ে থাকে। এদের ভাইরাল ম্যাট্রিক্স প্রোটিনের ওপর একটি লিপিড পর্দা থাকে। ভাইরাসের কেন্দ্রে একটি এক-সূত্রক পেঁচানো আরএনএ জিনোম থাকে, যা এন (নিউক্লিওক্যাপসিড) প্রোটিনের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে। এটি এলো (বৃহৎ) প্রোটিন ও পি (ফসফোপ্রোটিন) এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, যার ভাইরাল রেপ্লিকেশনের সময় আরএনএ পলিমারেজ এনজাইমের কাজ করে।

লিপিড পর্দার অভ্যন্তরে এফ (ফিউসন) প্রোটিন ট্রাইমার ও জি (সংযোগ) প্রোটিন টেট্টামারের কাটা (ঝঢ়রশব) থাকে। জি প্রোটিনের কাজ হচ্ছে ভাইরাসকে পোষক কোষের পৃষ্ঠে সংযুক্ত করা ইএফএনবি২ নামক একটি প্রোটিনের মাধ্যমে, যা অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণীতে বিদ্যমান। এফ প্রোটিন ভাইরাস পর্দাকে পোষক কোষপর্দার সঙ্গে একত্রীভূত করে এবং ভিরিয়নের আধেয়কে (পড়হঃবহঃ) কোষের অভ্যন্তরে পাঠায়। এছাড়া এই প্রোটিন আক্রান্ত কোষকে পার্শ্ববর্তী কোষগুলোর সঙ্গে একত্রীভূত করে একাধিক নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট বৃহৎ সিনসাইটিয়াতে পরিণত করে।

 

লক্ষণ

এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমত জ্বরে আক্রান্ত হয়। মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়, সে মানসিকভাবে অস্থিরতায় ভোগে

মন-মেজাজ সবসময় উত্তেজিত থাকে। মাঝে মধ্যে খিঁচুনিও দেখা দেয়

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়া ভাইরাসটি চার থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত  সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে

এনসেফালাইটিসের লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণগুলো অনেকটা ইনফ্লুয়েনজা জ্বরের মতো। যেমন জর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব, আলো সহ্য করতে না পারা প্রভৃতি

অন্যান্য উপসর্গগুলো

মাথা ঝিমঝিম করা, ঘুম ঘুম ভাব, জাগ্রত/সচেতন অবস্থার পরিবর্তনসহ অন্য মানসিক সমস্যা

 

প্রতিরোধে করণীয়

সরাসরি নিপাহ ভাইরাস নিরাময়ে কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক ভ্যাকসিন এখনও আবিষ্কার হয়নি। রোগের লক্ষণ বিবেচনা করে চিকিৎসকরা সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকেন। তবে প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়

স     বাদুড় থেকে প্রাদুর্ভাবের ক্ষেত্রে: পাখি দ্বারা আধা বা আংশিক ফল খাওয়া ও খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে

মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো প্রতিরোধে: আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। রোগীদের ব্যবস্থাপনায় ডাক্তার কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে

ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যেন হাতের মাধ্যমে ভাইরাসটি না ছড়ায়

রোগী যে পাত্রে খাবার খায় সে পাত্র যেন কেউ ব্যবহার না করে। রোগীকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান করতে হবে

রোগীর পরিচর্যা করার পর হাত ভালোভাবে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে

নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ওই এলাকার মানুষকে আপাতত খেজুর গুড় ও রস, আখের রস, পেঁপে, পেয়ারা, বরইসহ স্থানীয় ফল বা অর্ধেক খাওয়া ফল না খাওয়া। ফলমূল খেলেও ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে

রোগীর কফ ও থুতু যেখানে-সেখানে না ফেলে একটি পাত্রে রেখে পরে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে

লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে

 

চিকিৎসা

এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। ঠিকমতো শুশ্রƒষা করলে রোগী বেঁচে যেতে পারে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে জীবন রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই রোগের লক্ষণ দেখামাত্র রোগীকে নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।

 

ডা. জাকিউল হাসান

আইসিডিডিআর,বি

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০