নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বনানী এলাকার অভিজাত রেস্টুরেন্ট ‘টেপটেলস’। ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি। এমনকি ভ্যাট নিবন্ধনের আবেদনও করেনি। অথচ ভুয়া চালানে ভোক্তা থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নেয়। কিন্তু সেই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয় না। গত পাঁচ মাসে ভোক্তা থেকে নেওয়া ভ্যাটের প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। একজন ভোক্তার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

## বনানীর অভিজাত এলাকার প্রধান সড়কের রেস্টুরেন্ট
## ১৫% হারে পাঁচ মাসে ভ্যাট নিয়ে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ

মহাপরিচালক জানিয়েছেন, টেপটেলস বনানীর প্রধান সড়কের একটি রেস্টুরেন্ট (বাড়ি: ৬৭-৬৮, অটোগ্রাফ টাওয়ার, কামাল আতাতুর্ক রোড, বনানী)। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ক্রেতা টেপটেলস রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে বিল দিতে গিয়ে ভ্যাটের চালান চান। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পস মেশিনের মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধনবিহীন ৬.৩ চালান দিয়েছেন। সেই চালানসহ ওই ক্রেতা ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন।

এরই প্রেক্ষিতে ১৫ জুন সন্ধ্যায় ভ্যাট গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক মুনাওয়ার মুরসালীন এর নেতৃত্বে ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল ওই রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে গোয়েন্দা দল দেখতে পান, প্রতিষ্ঠানটি ক্রেতার কাছ থেকে ভুয়া ৬.৩ চালান ইস্যু করার মাধ্যমে যথারীতি ভ্যাট আদায় করছে। গোয়েন্দার দল রেস্টুরেন্টের কম্পিউটার থেকে বিক্রয় তথ্য জব্দ করেন।

তদন্তে আরো দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি সরকারের ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের জালিয়াতি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, যা ভ্যাট আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিটি খাবারের বিলে ‘ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন: অ্যাপলায়েড’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এবং এতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করা হয়েছে। অথচ এই ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেনি রেস্টুরেন্টটি।
ভ্যাট আইন অনুসারে, যে কোন ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা শুরুর পূর্বেই যথাযথভাবে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ এবং নির্ধারিত ৬.৩ ফরমে ক্রেতাদের ভ্যাট চালান ইস্যু করতে হবে। একইসাথে করমেয়াদ শেষে পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে স্থানীয় ভ্যাট অফিসে রিটার্নের মাধ্যমে ক্রেতাদের নিকট থেকে সংগৃহীত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ড. মইনুল খান জানান, এই রেস্টুরেন্ট ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ ব্যতিরেকে গত ৫ মাস ধরে ব্যবসা করে আসছে। নিবন্ধন ব্যতিরেকে ক্রেতাদের নিকট থেকে ভ্যাট কর্তন করছে। ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায়কৃত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমাও করছে না।
প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে জব্দকৃত তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি ১৫ জুন পর্যন্ত ভ্যাট আরোপযোগ্য পণ্যের বিক্রয়মূল্য ছিল ২ কোটি ৩২ লাখ ৬৩ লাখ ৯৭ টাকা; যার উপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৩৪ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৫ টাকা। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী মাসিক ২ শতাংশ হারে সুদ ২ লাখ ৯ হাজার ৭৪৫ টাকা প্রযোজ্য। ভ্যাট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখা পায়, খাবারের বিলে ‘ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন: অ্যাপলায়েড’ লেখা থাকলেও স্থানীয় ভ্যাট অফিসে এমন আবেদন পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. আনিস জানান, তারা ভ্যাট নিবন্ধনের জন্য এখনো কাগজপত্র সংগ্রহ করছে। ভ্যাট নিবন্ধন নেই, কিন্তু ক্রেতাদের নিকট বিলের মাধ্যমে কেন ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে-এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি।
মহাপরিচালক জানান, ভ্যাট নিবন্ধন না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা এবং ভুয়া চালানে ক্রেতাদের নিকট থেকে আদায়কৃত ভ্যাট আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আজ ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আত্মসাৎ করা ভ্যাট আদায় ও এ সংক্রান্ত অপরাধের সর্বোচ্চ জরিমানা আরোপ করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে। নিষ্পত্তির জন্য মামলার প্রতিবেদনটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে প্রেরণ করা হবে।
###