সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় একাধিক বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এতে স্থল বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ না এলেও সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে পেঁয়াজের আমদানি। ফলে সরবরাহ বাড়ায় বাজারে পণ্যটির দাম কমছে। আর ভালো মানের পেঁয়াজ কম দামে পাওয়া নিম্নমানের পেঁয়াজের ক্রেতা খুঁজে পাচ্ছেন না পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি বাড়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। সেখানকার আড়তে এখন ২৫ থেকে ৫২ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে আমদানি করা পেঁয়াজ। একই সঙ্গে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও দেশি পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও দাম কমেছে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স বার-আউলিয়া ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. আলাউদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় চীন, পাকিস্তান, মিসর ও তুরস্ক থেকে আসা পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী। বর্তমানে বাজারে পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়, মিসরের পেঁয়াজ ৪৮ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৫০-৫২ টাকা ও চীনের পেঁয়াজ ৩৪-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে যেসব পেঁয়াজ একটু নিম্নমানের সেগুলোর ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। ২০-২৫ টাকায় ওসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে চীন ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বেশি নষ্ট হচ্ছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বাজারে আসার দুদিনের মাথায় শিকড় ও চারা চলে আসছে। তবে দেশি পেঁয়াজের দাম একটু বেশি; দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়।’
খাতুনগঞ্জের বেঙ্গল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী উত্তম কুমার সাহা বলেন, ‘চীন থেকে আমদানি করা নি¤œমানের পেঁয়াজ বিক্রি করার ক্রেতা পাচ্ছি না। ২০-২৫ টাকার বিক্রি হচ্ছে এসব পেঁয়াজ। খুচরা দোকানিরা এসব পেঁয়াজ না কিনলেও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা (যারা ভ্যানগাড়িতে বিক্রি করেন) কম দামে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে সেটা খুবই সীমিত। এসব পেঁয়াজে প্রতি বস্তায় কয়েক কেজি নষ্ট থাকে। তারা সেগুলো বাছাই করে ভ্যানগাড়িতে বিক্রি করেন।’
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের ছয়টি স্থলবন্দর মিলে সারা দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ২৩ হাজার ৯৩০ টন ৪০৩ কেজি, যার আমদানি মূল্য ৮৭ কোটি ৩৭ লাখ ৯০ হাজার ৬২৬ টাকা। বিপরীতে সরকার রাজস্ব আয় করেছে ৩৫ লাখ ১০ হাজার টাকা। এসব বন্দরের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ২০ হাজার ৭৪৯ টন ৬৩৫ কেজি; এর আমদানি মূল্য ৭৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে আমদানি হয়েছে ৫৬০ টন; আর আমদানি মূল্য দুই কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এছাড়া সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ২৪৭ টন, হিলি বন্দর দিয়ে ১২৬ টন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে এক হাজার ৭৬ টন, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ৩৫ টন ও ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে প্রায় এক টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এর পরদিন থেকেই পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প দেশগুলোর অনুমতি নিতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে এই অনুমতি নেন আমদানিকারকরা।
উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের হিসাবে, এবারে এখন পর্যন্ত ১৮টি দেশ থেকে ৪ লাখ ৭২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছেÑমিসর, পাকিস্তন, তুরস্ক, চীন, মিয়ানমার ও নেদারল্যান্ডস থেকে। এই ছয় দেশ থেকে মোট আমদানির ৯৫ শতাংশ আসছে। এছাড়া নিউজিল্যান্ড, আলজেরিয়া, ইউক্রেন, মালয়েশিয়া ও ইরাক থেকেও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।